কলকাতা: এ বছর উৎসবের দিনগুলিতে কোনওরকম আতস বাজিই পোড়ানো যাবে না। শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি। সমিতির সভাপতি জানালেন, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন তাঁরা।
আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বাবলা রায় এদিন আদালতের নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট ও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের যে নির্দেশ গোটা দেশের জন্য জারি করা হয়েছে, তাকে নস্যাৎ করে দিয়ে এক তরফা শুনানি শুনে আজ যে ভাবে আতস বাজি নিষিদ্ধ করা হল আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি এই রায়ে আমরা খুশি নই। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।”
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন এজি জানান, ‘এয়ার কোয়ালিটি যদি ঠিক থাকে সেখানে পরিবেশ বান্ধব বাজি ফাটানো যায়। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ পরিবেশ বান্ধব বাজির কথা বলেছে। পর্ষদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে কী এই গ্রিন বাজি। এখানে কিউআর কোড থাকে। ফলে গ্রিন বাজি বাকি বাজির থেকে আলাদা করে চিনতেও সুবিধা হয়।’
এরপরই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানতে চান, এ রাজ্যে এই মুহূর্তে কোভিডের কী পরিস্থিতি। একই সঙ্গে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন অ্যাজমার রোগীদের কী কষ্ট, এই শহরে কতজন এমন রোগী আছেন সেই পরিসংখ্যান সম্পর্কে সকলে অবগত কি না। যদিও বাজি প্রস্তুতকারকদের আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী দাবি করেন, গ্রিন বাজি তাঁদের ক্ষতি করে না। বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় প্রশ্ন করেন, গ্রিন বাজি যে শরীরের ক্ষতি করে না সেটার দায়িত্ব কে নেবে?
আদালতের বক্তব্য, এই পরিবেশ বান্ধব বাজি নিয়ে কারও কাছেই কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। গ্রিন বাজি কী, তাতে কী কী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় সেটা কে পরীক্ষা করবে? আদালতের বক্তব্য মানুষের জীবন আগে। ব্যবসার অধিকারের থেকেও জীবনের অধিকার বড়। এরপরই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের অবকাশকালীন বেঞ্চ নির্দেশ দেয় কোনও রকম বাজিই এবার কালীপুজো, ছটপুজো কিংবা ক্রিসমাস, নিউ ইয়ারে পোড়ানো যাবে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা চিকিৎসকরা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি দীপাবলি থেকে নিউ ইয়ারের পর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে দেখা যায় বায়ু দূষণ হু হু করে বেড়েছে। মানুষের জন্য তা মোটেই ভাল নয়। আর কোভিডের সময় আমাদের আলাদা করে ফুসফুসের সমস্যা হচ্ছে। তাই একটু কড়া হতেই হবে।”
যদিও আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বাবলা রায়ের কথায়, “সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির ৩১ লক্ষ মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। বাড়ি শ্রমিক, তাঁদের পরিবার রয়েছে। যারা রাজ্যের আতসবাজি প্রেমী রয়েছেন, বলব এর বিরোধিতা করুন। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে সারা ভারতবর্ষে গ্রিন ফায়ারওয়ার্কস। সেখানে কলকাতা হাইকোর্ট ঘোষণা করে দিল কোনও রকম আতস বাজি চলবেই না। এটা কী ভাবে হয়। আমাদের মনে হয়েছে এটা এক তরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।”
আরও পড়ুন: Diwali Firecrackers ban: দীপাবলি, ছটে কোনওরকম বাজিই ফাটানো যাবে না, সবুজ বাজিও নিষিদ্ধ করল আদালত