দেড় ঘণ্টায় সামান্য উন্নতি বুদ্ধবাবুর, কমেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা

দুপুর আড়াইটে নাগাদ তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দেড় ঘণ্টায় সামান্য উন্নতি বুদ্ধবাবুর, কমেছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা
ফাইল ছবি

| Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Dec 09, 2020 | 10:31 PM

কলকাতা: শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে উডল্যান্ডস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সন্ধেবেলা দেড় ঘণ্টার মেকানিক্যাল সাপোর্টের পর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি বুদ্ধবাবুর। তাঁর শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ১৩১ থেকে কমে ৫০ হয়েছে। যা কিছুটা আশার খবর। জানিয়েছেন হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু। ভর্তি করার সময় বুদ্ধবাবুর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৮৮। সন্ধে ৬টা নাগাদ যেটা বেড়ে হয় ১৩১। এরপরই মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে এখনও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলেই খবর হাসপাতাল সূত্রে।

সাধারণ মানুষের দেহে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা হল ৩০-৪০। তৃতীয় এবিজি রিপোর্ট অনুযায়ী, বুদ্ধবাবুর দেহে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ৫০-এর অর্থ হল, কৃত্রিম উপায়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, এটা আশার খবর। তবে কী কারণে রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বাড়ল, তা চিহ্নিত না হ‌ওয়া পর্যন্ত ভেন্টিলেটর থেকে বার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।

উডল্যান্ডসের মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, বুদ্ধবাবু সিওপিডি’র (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগী। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সেই রোগের মাত্রাবৃদ্ধির জেরে তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রাবৃদ্ধিতে প্রায় শ্বাসযন্ত্র অকেজো হ‌ওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই পরিকল্পিতভাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভেন্টিলেট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা যে তৃতীয় এবিজি রিপোর্টে ৫০-এ নেমেছে, তাতে বলা যায় শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে, তবে বিপদ কাটেনি। কোন‌ও কোন‌ও চিকিৎসকের মতে, উনি এখনও সিগারেট পুরোপুরি ছেড়ে উঠতে পারেননি। সিওপিডি রোগীদের পক্ষে যা স্বাস্থ্যকর নয়।

এখন উদ্বেগের জায়গা কী কী? মেডিক্যাল বোর্ডের ওই সদস্যেরা জানান, ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন রোগী যাতে সংক্রমণের শিকার না হন তা খেয়াল রাখতে হচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সজাগ থাকতে হবে।

যদিও আশা জাগিয়েছে রাজ্যপালের সন্ধেবেলার টুুইট। হাসপাতাল থেকে বেরোনর পর তিনি লেখেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেখভাল করা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।’

সন্ধে বাড়তেই অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। তাঁকে মেকানিক্যাল সাপোর্ট দিতে হয়। দেহে আচমকাই বৃদ্ধি পায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা। তাই বাইপ্যাপ থেকে বের করে মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। ইতিমধ্যেই উডল্যান্ড হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, ‘অবস্থা ভাল না, সঙ্কটজনক, ডাক্তাররা যা ভাল বুঝবেন করবেন। আমরা দেখিনি। খবর নিলাম। অচেতন রয়েছেন।’

বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচ চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাতে শামিল রয়েছেন চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল, পালমনোলজিস্ট ডাঃ অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিসিইউ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌতিক পণ্ডা, চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী এবং অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট আশীষ পাত্র। আগে তাঁকে বাইপ্যাপে রাখা হলেও এখন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তিনি অক্সিজেন নিতে পারছেন না বলে খবর হাসপাতাল সূত্রে। তবে হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকায় আশার আলো দেখছেন চিকিৎকেরা। তাঁর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্য়ান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে।

অসুস্থ অবস্থায় বুধবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে  (Buddhadeb Bhattacharya)। এদিন সকাল থেকেই তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক। এরপর দুপুর আড়াইটে নাগাদ তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অবস্থা স্থিতিশীল হলে ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হবে। দুপুর পৌনে ৩টে নাগাদ এইচআরসিটি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সিটি স্ক্যান রিপোর্টে কোভিডের ইঙ্গিত ছিল না। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জানা যায়, বুদ্ধবাবু কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

বিকেল ৫টায় হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়, অবস্থা সঙ্কটজনক থাকলেও চিকিৎসায় অল্প সাড়া দিচ্ছেন বুদ্ধবাবু। রক্তচাপ এখন ঠিক আছে। বছরের এ সময় সিওপিডি রোগীদের শ্বাসকষ্টজনিত যে সমস্যা হয়, তার‌ জেরেই অসুস্থতা বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

বুদ্ধবাবুর মেডিক্যাল বুলেটিনে ল্যাকুনা ইনফ্র্যাক্ট নামে একটি রোগের কথা বলা আছে। ল্যাকুনা ইনফ্র্যাক্ট হল, একটি বিশেষ ধরনের স্ট্রোক। সাধারণত দু’ধরনের স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কের শিরা ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হলে বলা হয় হেমোরেজিক স্ট্রোক। আরেক ধরনের স্ট্রোকে রক্তক্ষরণ হয় না। এক্ষেত্রে রক্ত কম যাওয়ায় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কোষের মৃত্যু ঘটে। একে বলে ইসচেমিক স্ট্রোক বা থ্রম্বোসিস। থ্রম্বোসিসে রক্ত জমাট বাঁধার আকৃতি বড় হয়। কিন্তু জমাট বাঁধা রক্তের আকার যদি অতি ক্ষুদ্র হয় তবে তাকে বলে এম্বোলিজম। এর জন্য মস্তিষ্কের অল্প জায়গা জুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানা যাচ্ছে, বুদ্ধবাবুর যা হয়েছে তা এক ধরনের ইসচেমিক স্ট্রোক। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়। সমস্যাটি খুব পুরনো না হলে সিটি স্ক্যানে এই রোগ ধরা পড়ার কথা নয়।

মাসকয়েক আগেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ রয়েছে। সেই সময় তাঁকে দেখতে যান বহু নেতা-মন্ত্রীই। পরবর্তী সময়ে বাড়িতে গিয়েও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

বুধবার সকাল থেকেই শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। তিনজন ডাক্তার এদিন বুদ্ধবাবুকে বাড়িতে চিকিৎসা করেন, বলে খবর। চিকিৎসকরা দেখেন, শরীরে অক্সিজেনর মাত্রা বেশ কম। রক্তচাপ ও পালস রেট নিয়েও সমস্যা বাড়তে থাকে। এরপরই চিকিৎসকের পরামর্শে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে উডল্যান্ডস হাসপাতালের র‌ওনা দেওয়া হয়। সেখানে দুপুর ২টো বেজে ৩২ মিনিট নাগাদ ভর্তি করা হয় তাঁকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ৫ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়। বুধবার বিকেলে রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বুদ্ধবাবুকে দেখতে হাসপাতালে যান। এসেছেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত মিশ্রও।

অসুস্থতার খবর পেয়ে বুদ্ধবাবুর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন রয়েছি। তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।’

 

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনায় টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। তিনি লেখেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসাধীন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।’

আরও পড়ুন: পিকে দলের ভাল চাইছে নাকি বিভাজন! তোপ বৈশালীর