
কলকাতা: ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগস্ট। ঠিক কী ঘটেছিল নেতাজির সঙ্গে? বিমান দুর্ঘটনা নাকি সবটাই একটা সাজানো তথ্য। এই একটা অন্তর্ধান রহস্য চিরকাল বিচলিত করেছে দেশের নাগরিক, বিশেষ করে বাঙালিদের। গড়া হয়েছে একাধিক কমিশন। তারা জানিয়েছে, দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তারপর কোথায় গিয়েছিলেন নেতাজি? সেই নিয়ে বিশেষ কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ মেলেনি। পাশাপাশি বিতর্ক রয়েছে তাঁর চিতাভস্ম নিয়েও। ২০২২ সালে নেতাজির চিতাভস্ম ভারতে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিল সুভাষ-কন্যা অনিতা বসু পাফ। কিন্তু সেই চিতাভস্ম কি আদৌ নেতাজির?
বৃহস্পতিবার এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন অশোকনাথ বসু দুই মেয়ে তথা জয়ন্তী রক্ষিত, তপতী ঘোষ ও এক ছেলে আর্য বসু। বলে রাখা ভাল, এই অশোকনাথ বসু ছিলেন নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের সময়ে অন্যতম সহযোদ্ধা। এদিনের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুই নেতাজি গবেষক, যথাক্রমে সৈকত নিয়োগী ও সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত।
তারা জানিয়েছেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানের তাইহোকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনা হয়নি। সেই প্রসঙ্গে লন্ডনের অ্যাডাম ম্যাথিউ আর্কাইভ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি রিপোর্টও প্রকাশ করেন তারা। সুতরাং, যখন বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুই হয়নি, তাহলে কেন কেন্দ্রের কাছে রেনকোজির মন্দিরে থাকা তাঁর তথাকথিত চিতাভস্ম ফেরানোর দাবি তোলা হচ্ছে? বৈঠক থেকেই প্রশ্ন তোলেন নেতাজির মেজো দাদা শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলের পরিবার।
কীভাবে প্রকাশ্য়ে এল এই রিপোর্ট? নেতাজি গবেষক জানাচ্ছে, গবেষণার খাতিরে নানা দেশে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত রিপোর্ট পড়তে শুরু করেন তিনি। সেই খান থেকেই এই রিপোর্টের হদিশ মেলে। গবেষক আরও জানিয়েছেন, নেতাজির প্রচলিত মৃত্যুর দিন যে তাইওয়ানের তাইহোকুতে কোনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। সেই কথা রিপোর্ট মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিল তাইওয়ান সরকার। এরপরেই গবেষকের অভিযোগ, তৎকালীন ইউপিএ সরকার রিপোর্ট পাওয়া সত্ত্বেও তা প্রকাশ্যে আনেনি। উল্টে আগামী দিনে নেতাজিকে নিয়ে চলা কমিশনগুলিকেও ভুল পথে চালনা করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত আরও এক গবেষক সৌমব্রত দাশগুপ্ত বলেন, ‘তাইওয়ান সরকারের এমন রিপোর্ট ভারত সরকার ষাটের দশকে পাওয়ার পরেও তা ধামাচাপা দিয়ে দিল। যা প্রমাণ করে, নেতাজির চিতাভস্ম ও বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে কত বড় চক্রান্ত তৈরি করা হয়েছিল।’ পাশাপাশি, বৈঠক থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার ধন্যবাদ জানায় দুই গবেষক। তাদের কথায়, ‘রাজ্য সরকারের হাত ধরেই নেতাজির ৪৬টি গোপন তথ্য ডিক্লাসিফাই করা হয়েছিল। কেন্দ্র সম্প্রতি ৩০০টি রিপোর্ট ডিক্লাসিফাই করেছে।’