কলকাতা: শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ। কোভিড বিধি মানা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের কমিটি। এই তিন সদস্যের কমিটিতে থাকছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন।
গঙ্গাসাগর নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ
গঙ্গাসাগর মেলার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই একটি প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, যে প্রচুর লোক সমাগমে কীভাবে কোভিড বিধি মানা সম্ভব? বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসেন। শুক্রবারের শুনানিতেও এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে বেঞ্চ জানায়, মেলায় কোভিড বিধি মানা হয় কিনা, তার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে কোনও ধর্মীয় স্থানে ৫০ এর বেশি লোক হওয়া যাবে না। সেই বিধি এক্ষেত্রেও মানতে হবে।
সাধারণভাবে দেখা যায়, এই ধরনের নির্দেশিকা রাজ্য সরকার তাদের বিজ্ঞপ্তিতে এমনিই দিয়ে রাখে। এক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। তবে প্রশ্ন থাকছে, কপিল মুনির আশ্রমেই যেখানে ৫০-এর বেশি লোক হবে, তাহলে গঙ্গাসাগরের পুরো তট জুড়ে এই নিয়ম কীভাবে কার্যকর হবে? বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে, কপিল মুনির আশ্রমেই ৫০-এর বেশি মানুষ প্রবেশ করতে পারবেন না। পাশাপাশি যাঁরা আসছেন, তাঁদের কোভিড টেস্ট হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যদি পজিটিভ হন, তাহলে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। এই বিষয়টি দেখার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে আদালত।
মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্য
এই নিয়ে মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীবী চক্রবর্তী বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঙ্গাসাগর আইল্যান্ডকে নোটিফায়েড এরিয়া হিসাবে ঘোষণা করতে (রাজ্য সরকার চাইলে যে কোনও মুহূর্তে যে শাসন ওই এলাকায় কায়েম করতে পারে)। দ্বিতীয়ত, ২০২২ সালে ২ জানুয়ারি রাজ্য সরকার যে নোটিফিকেশন জারি করেছিল, মূলত ১০ নম্বর পয়েন্টটি অর্থাৎ ৫০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না ধর্মীয় স্থানে। এই বিষয়টি উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে যে রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে এই পয়েন্টটি মানা হয় এক্ষেত্রেও। গঙ্গাসাগরে এই নীতি মানা হচ্ছে। রাজ্য সরকারকে সেক্ষেত্রে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের যে নির্দেশ ছিল, তা মানতে হবে। মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন যে রোজ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে জানাতে হবে, তাঁরা যেন গঙ্গাসাগর না যান! গঙ্গাসাগরে তাঁদের জন্য কতটা বিপদ রয়েছে, সেই সচেতনতামূলক প্রচার করতে হবে রাজ্যকে।”
কমিটি দেখবে যে রাজ্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা। যদি কমিটি তদন্তে দেখে হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে না, তাহলেই সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করে দেওয়ার আর্জি জানাবে তারা।
গঙ্গাসাগরে ইতিমধ্যেই করোনার থাবা
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বাবুঘাটে গঙ্গাসাগরের যে ট্রানজিট ক্যাম্প করা হয়েছে সেখানে আরটিপিসিআর ক্যাম্প করেছে কলকাতা পুরসভা। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত পুণ্যার্থীদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানেই ৬ ব্যক্তির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগরে ৩ হাজার পুণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে যে কেউ কোভিড পজিটিভ রয়েছেন কিনা, সেটাও বিচার্য। তাঁদেরকে কে খুঁজে বার করবেন, সেটাও প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে…
এ প্রসঙ্গ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “আদালতের রায়কে সম্মান জানাই। তবে এটা বলতে পারি, এই শর্তগুলি তৈরি করবে কে? শর্ত যে তৈরি হবে, তা মানানোর দায়িত্ব কার? আমরা যে গতিতে এগোচ্ছিলাম, সেটা তরান্বীত হল।হয়তো নতুন কোন স্ট্রেনের জন্মলাভ হতে পারে? সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা এই সুযোগ পেলেও না নেওয়া চেষ্টা করুন। তাতে আদালতের সম্মানও থাকবে, রাজ্য সরকারেরও থাকবে, আপনারাও সুরক্ষিত থাকবেন।”
বিরোধীদের বক্তব্য
সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে বলছেন, আগামী ১৫ দিন গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে গঙ্গাসাগরের মতো একটি জায়গায়, যেখানে ৫ লক্ষেরও বেশি ভিড় হতে পারে, সেখানে ভয়াবহতা আরও বেশি হবে।”