কলকাতা: ভোটের ফল প্রকাশের এক মাস কাটতে না কাটতেই তৃণমূলে মুকুল রায়ের (Mukul Roy) প্রত্যাবর্তন। সামান্য একটু পিছিয়ে ঘটনাক্রমে নজর রাখলে বোঝা যাবে বহু দিন ধরেই একটু একটু করে তৈরি হচ্ছিল মঞ্চ।
মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠরা বলেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ই নাকি মুকুল রায় বিজেপি ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। পরে অবশ্য মত বদলান। তবে এরপর থেকে তৃণমূল সম্পর্কে চড়া সুরে তাঁকে কথা বলতে শোনা যায়নি। বিধানসভা ভোটের প্রচারেও তৃণমূল সম্পর্কে বেশি কড়া কথা বলেননি মুকুল রায়। বরং ভোটপ্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে মুকুলের প্রশংসা শোনা গিয়েছে। তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট বলেছেন, “মুকুল শুভেন্দুর মত এত খারাপ নয়।”
এর পর ৭ মে বিধানসভায় শপথ নিতে গিয়ে সুব্রত বক্সীর সঙ্গে সাক্ষাতে জল্পনা বাড়ে। সেই জল্পনা আরও খানিক উস্কে মুকুল সেদিন বলেছিলেন, “প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কিছু না কিছু কারণ থাকে চুপচাপ থাকতে হয়। তবে আমি যা বলার বলব খুব তাড়াতাড়ি।” কী বলবেন, সেদিন তা স্পষ্ট না করলেও কোথাও যে মুকুল রায়ের ভিতরে দ্বন্দ্ব চলছিল তা সেদিনই ধরা পড়েছিল। পরের দিনই অবশ্য টুইট করে মুকুলকে আশ্বস্ত করতে হয়, তিনি বিজেপিতেই আছেন।
I’m happy to welcome Shri Mukul Roy, National Vice-President of @BJP4India into the @AITCofficial family. We empathize with his many struggles in BJP & assure him that we’ll work together as a team to ensure the brightest future for all Indians under @MamataOfficial‘s leadership. pic.twitter.com/b1Rv0tmy0v
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 11, 2021
কিন্তু ভোটের পর কোনও দলীয় বৈঠক, সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। ৩০ মে ফেসবুকে খোলাখুলি মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুকে বিজেপির সমালোচনা করতে দেখা যায়। এর তিনদিন পরই মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোটবেলার স্মৃতি উস্কে অভিষেক বলেন, “মুকুল রায়ের স্ত্রী বা শুভ্রাংশুর মা হিসাবে নয়, ওনার সঙ্গে আমার ছোটবেলার একটা বড় সময় কেটেছে। উনি আমার মাতৃসম।”
আরও পড়ুন: বিজেপি থেকে ‘ঝরছে’ মুকুল, অথচ আভাসই পেলেন না ‘জুটি’ কৈলাস
সূত্রের খবর, ততদিনে বেশ কয়েকবার অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করেন মুকুল রায়। ঠিক করে ফেলেন তৃণমূলেই ফিরবেন। ৮ জুন কলকাতায় হেস্টিংসে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে দলীয় বৈঠকে গরহাজির থেকে বুঝিয়ে দেন ‘কিছু একটা হতে চলেছে’। দিলীপ ঘোষ অবশ্য মুকুল রায়ের পারিবারিক সমস্যাকে এর কারণ হিসাবে দেখান। তবে মুকুল সে দাবি নস্যাৎ করে বলেছিলেন, দলীয় বৈঠকের কথা তিনি জানতেনই না। জ্বলছেন নিজের জ্বালায়। তিনদিনের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে ফিরলেন পুরনো দলে।
রাজনৈতিক মহলের মতে মুকুল মনে করছিলেন, ইদানিং তিনি বিজেপিতে সে ভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন না। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মত দায়িত্ব এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুকুলের ছিল না। মুকুলকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিধানসভা ভোটে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সবেই বিজেপির থেকে দূরত্ব বাড়ে মুকুল রায়ের। চার বছর পর ঘরে ফেরেন ‘ঘরের ছেলে’।