কলকাতা: বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (DA) দেওয়ার দাবিতে অনশনে বসেছেন রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা। ইতিমধ্যে তাঁদের অনশন চতুর্থ সপ্তাহে পড়েছে। এবার রাজ্য সরকার ও কর্মচারীদের বিবাদ মেটাতে আসরে নামলেন স্বয়ং রাজ্যপাল (C.V Anand Bose)। অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে শনিবার টুইট করেছেন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস। আর তাঁর সেই টুইট বার্তা পেয়ে খুশি আন্দোলনকারীরা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে রবিবারই সকাল ১১ টায় পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাজভবন যাবেন। সেখানে রাজ্যপালের কথায় আশ্বস্ত হলে অনশন উঠে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্য সরকারের কর্মচারী সংগঠন, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্য ভাস্কর ঘোষ। অন্যদিকে, রাজ্যপালের অনুরোধ মেনে অনশন তুলে নিলেও আন্দোলন জারি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা টুইট করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও।
জানা গিয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় সরকারি কর্মচারীদের অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে রাজভবনের তরফে পরপর দুটি টুইট করা হয়েছে। প্রথম টুইটে বলা হয়েছে, “রাজ্যপাল গভীরভাবে ব্যথিত যে, সংক্ষুব্ধ কর্মচারীদের অনশন চতুর্থ সপ্তাহে প্রবেশ করছে। এই সমস্যাটি জটিল হতে পারেয কিন্তু সবসময় সমস্যা সমাধানের একটি সহজ উপায় আছে। আমাদের ভাইদের মূল্যবান জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
1/
Governor is deeply pained that the hunger strike of the aggrieved employees is entering its fourth week. The issues involved may be complex but there is always a simple way out. What is of paramount importance is the precious life of our brothers
Cont’d
— Governor of West Bengal (@BengalGovernor) March 11, 2023
দ্বিতীয় টুইটে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে রাজ্যপালের তরফে বলা হয়েছে, “যাঁরা ক্রমাগত উপবাস করে চলেছেন তাঁদের হৃদয়ের কাছাকাছি রয়েছেন রাজ্যপাল। যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনশনে আছেন তাঁদের দয়া করে এটি শেষ করার জন্য অনুরোধ করছেন রাজ্যপাল এবং সব পক্ষকে একসঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে এই অস্থিরতা থেকে একটি গ্রহণযোগ্য উপায় খুঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করছেন।”
যদিও রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোসের তরফে করা এই টুইটের কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিজেপি। ডিএ নিয়ে কর্মীদের আন্দোলন থামানো আর কোনও আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব নয় বলে পাল্টা দাবি রাজ্য বিজেপির সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্যপালের টুইটের প্রেক্ষিতে তিনি পাল্টা বলেন, “রাজ্য সরকার ডিএ মামলায় স্যাট-এ হেরেছে, সিঙ্গল বেঞ্চে হেরেছে, ডিভিশন বেঞ্চে হেরেছে। রিভিউ পিটিশনে তিরস্কৃত হয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সময় নষ্ট করছে। ৩ শতাংশ ডিএ দিয়ে এখন একটা জটিল প্রক্রিয়ায় চলে গিয়েছে। এখন আর কোনও আলোচনায় বসা সম্ভব নয়। বরং রাজ্যপালের রাজ্যকে বলা উচিত, বকেয়া ডিএ সবটা দিয়ে দিক।”
যদিও রাজ্যপালের অনুরোধ মেনে আন্দোলনকারীদের অনশন তুলে নেওয়ার বার্তা দিয়ে টুইট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে অনশন তুলে নিলেও তিনি আন্দোলন জারি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেন, “আপনাদের দাবি সঠিক। রাজ্য সরকারকে সেই দাবি মানতে হবে।”
I urge the agitating WB Govt Employees, who’ve been holding an indefinite hunger strike, to kindly consider Hon’ble Governor’s request & end your hunger strike. However, please carry on with your agitation, as your demands are 100% legitimate and the State Govt must accept them. https://t.co/GAGJLG7YDY
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) March 11, 2023
তবে রাজ্যপালের টুইট বার্তার পরই অনশন তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত মিলল ডিএ আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে। আন্দোলনকারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্য ভাস্কর ঘোষ জানান, রাজ্যপালের অনুরোধ মেনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী কালই সকাল ১১ টায় তাঁদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাজভবন যাবেন। সেখানে রাজ্যপালের কথায় আশ্বস্ত হলে অনশন উঠে যেতে পারে।
এদিকে, রাজ্যপালের টুইট নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “উনি যেমন অনশন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে টুইট করেছেন, তেমনি রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লিকে বলা উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার বকেয়া মিটিয়ে দিলে মুখ্যমন্ত্রী ডিএ-সহ একাধিক সামাজিক প্রকল্পের কাজ করতে পারেন।”
প্রসঙ্গত, ডিএ নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। বিক্ষোভ-অনশনের পাশাপাশি শুক্রবার ধর্মঘটেও সামিল হন তাঁরা। যদিও কড়া হাতে এই ধর্মঘট প্রতিহত করার চেষ্টা করে রাজ্য সরকার। যাঁরা শুক্রবার চাকরিতে যোগ দেননি তাঁদের সার্ভিস ব্রেক করা হবে এবং একদিনের বেতন কাটা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যা নিয়ে পাল্টা প্রতিবাদ জানায় বিজেপি।