নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তাতেও ‘খোঁচা’ রাজ্যপালের! আমফান টেনে বললেন, “প্যারালাইসিস প্রশাসন”
শুভেচ্ছাপত্রে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরসভাকে এভাবে খোঁচা দেওয়ায় রীতিমতো বিস্মিত প্রশাসনিক কর্তারাও।
কলকাতা: নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েও রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরসভাকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। বৃহস্পতিবার নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য সহ রাজভবন থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়। মহামারীর বছর পার করার পর গোটা বিশ্ব নতুন বছরে অনেক আশা-প্রত্যাশা নিয়ে পা রাখছে গোটা বিশ্ব। সেই আশা-প্রত্যাশা যাতে প্রত্যেকের পূর্ণ হয়, সে ব্যাপারে রাজ্যপাল প্রার্থনা করেছেন।
কিন্তু তারপরই তিনি তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২০২০ মানুষকে অনেক কিছু করতে শিখিয়েছে। বহু বিপদ দেখেছে গোটা বিশ্ব। আমফানের পর টানা ১০ দিন অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে কলকাতাবাসীকে। সেই সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে সতর্কবার্তা আসার পরেও প্রশাসন ‘প্যারালাইসিস’হয়ে গিয়েছিল। যার দরুন কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা চাক্ষুষ করেছে মানুষ।
রাজ্যপাল এ-ও জানিয়েছেন, পড়শি রাজ্য ওড়িশার দমকল বাহিনীও পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এই শহরের। সেনা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে শহর। এই বছরটি মানুষকে সহ্যক্ষমতা দিয়েছে। পরস্পরকে সাহায্য করতে শিখিয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যপাল এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে থাকা ‘দ্বন্দ্ব’নির্বাচনের প্রাক্কালে যে আরও গাঢ় হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
শুভেচ্ছাপত্রে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরসভাকে এভাবে খোঁচা দেওয়ায় রীতিমতো বিস্মিত প্রশাসনিক কর্তারাও। রাজনৈতিক বিষয় অথবা পুলিস সম্পর্কিত নানা ঘটনায় রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুভেচ্ছাবার্তাতেও যে এভাবে রাজ্যপাল আমফানের প্রসঙ্গ টেনে খোঁচা দেবেন, তা অনভিপ্রেত।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আমফানের শুরুতে এবং পরবর্তী সময়ে কলকাতা পুর প্রশাসক, ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর, বরো কো-অর্ডিনেটর, রাজ্য প্রশাসনের আমলা থেকে সাধারণ কর্মী, প্রত্যেকে দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন প্রত্যেকে। যিনি এখন এত বড় বড় কথা বলছেন, তিনি সেই সময় কোথায় ছিলেন! বিজেপির রাজ্যের নেতারা সেই সময় কোথায় ছিলেন? সাধারণ মানুষের পাশে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাই আমরা কী করেছি সেই সময়, তা মানুষ জানেন।”
ইতিমধ্যেই রাজ্যপালকে অপসারণের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ নিয়ে তৃণমূলের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পাল্টা কিছু না বললেও এদিনের শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে নিজের অবস্থান আবারও রাজ্যের শাসকদলকে বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যপাল। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: ‘জমিচোর’ অমর্ত্য! দিলীপের মন্তব্যে কড়া জবাব দিলেন যাঁরা
এদিন রাজ্যপালের শুভেচ্ছাপত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতারও উল্লেখ ছিল। আবার বক্তব্যের শেষের দিকে ‘বহিরাগত’ ইস্যুও টেনেছেন তিনি। বলেছেন, “বহিরাগতদের বিভেদমূলক ষড়যন্ত্র এড়িয়ে চলা উচিত।” বাংলার নির্বাচনে অশান্তি নিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, “বাংলার ঐতিহ্যের পাশাপাশি অশান্তিহীন নির্বাচন করে দেশে নজির গড়া উচিত।” রাজ্যের পুলিসকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।