কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টাকে ম্যারাথন জেরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। বৃহস্পতিবারই কলকাতা হাইকোর্ট, রাত বারোটার মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নির্দেশ দেয়। সেই মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার বাড়িতে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তাঁকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ফিরে যায় সিবিআই। এরপর নিজের আইনজীবী নিয়ে আরও রাতে নিজাম প্যালেসে পৌঁছন তিনি। রাত ২.২৫ মিনিট পর্যন্ত চলে জিজ্ঞাসাবাদ। আজ হাইকোর্টে ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। নিজাম প্যালেস থেকে বেরনোর সময়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই দিতে চাননি এসএসসি-র প্রাক্তন কর্তা। শুধু বললেন, “কিচ্ছু বলা যাবে না। সরুন এখান থেকে।”
প্রসঙ্গত, এসএসসি- নিয়োগ মামলায় ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু সিবিআই তদন্তই নয়, মামলার শুনানি চলাকালীন তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য, ‘এনাফ ইজ় এনাফ! হাত কে বাঁধে দেখব।’ কারণ এর আগেও এসএসসি- সংক্রান্ত একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ তাতে স্থগিতাদেশ জারি করে। শেষমেশ এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় আবারও কড়া পদক্ষেপ করেছে হাইকোর্ট। এসএসসি-র বিরুদ্ধে হওয়া গ্রুপ ডি সংক্রান্ত মামলায় ফের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আগেই অভিযোগ উঠেছিল গ্রুপ ডি পদে ৯৮ জনের নিয়োগ নিয়ে। যাঁদের মধ্যে ৯০ জনের নাম প্যানেলেই ছিল না। ৮ জনের নাম ছিল পিছনের সারিতে।
স্কুল সার্ভিস কমিশন রিপোর্ট দিয়ে জানায়, তারা নিয়োগের সুপারিশ করেনি। আর অন্যদিকে বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন জানায়, কমিশনের কাছ থেকে সুপারিশ পেয়েই নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, এসএসসি-র উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই।
বৃহস্পতিবার আবারও সেই নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন. “স্কুল সার্ভিস কমিশনের অ্যাক্টেই বলা রয়েছে যে কার্যপদ্ধতি কী হবে। এই ধরনের নিয়োগ, যার কোনও আইনি স্বীকৃতিই নেই, তাহলে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে কোনওভাবে।” তবে এই প্রথমবার নয়, এর আগেও একাধিকবার মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু প্রত্যেকবারই ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয়ে যায় সেই নির্দেশ। বুধবার এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রশাসনিক নির্দেশে তিনি লিখেছেন, “কাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের হাত বেঁধে দিচ্ছে? দেশ দেখুক, বিচার করুক, যে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়া নিয়ে কী চলছে।” বৃহস্পতিবারও শুনানির সময়ে তিনি বলেছেন, “এনাফ ইজ় এনাফ! আমার হাত কে বাঁধে, আমিও দেখব।” তারপরই মধ্যরাত পর্যন্ত প্রাক্তন এসএসসি কর্তা পড়লেন সিবিআই-এর জেরার মুখে।