কলকাতা: কোনও সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ মানেই লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী চাকরি পাওয়ার আশায় ফর্ম ফিল আপ করেন। এর জেরে পরীক্ষার আয়োজকদের ঘরে জমা পড়ে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু সেই পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হয়ে যে নিয়োগ হবে এ রকম নিশ্চয়তা সব সময় থাকে। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক বছরে নিয়োগের পরিস্থিতি এই চিত্রই তুলে ধরেছে। কিন্তু পরীক্ষার আয়োজন করে কোটি কোটি টাকা ঢুকেছে পর্ষদের ঘরে। এখানেই প্রশ্ন ওঠে, বেকারদের টাকায় কী ফুলে ফেঁপে উঠছে পর্ষদের কোষাগার?
২০১৪ সালে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অনেক প্রার্থীই এখনও পাননি চাকরি। ২০১৭ সালে টেট উত্তীর্ণ এক জনও চাকরি পাননি। এর পর রাজ্যে আয়োজিত হয়েছে বেশ কয়েকটি টেট পরীক্ষা। গত বছরও টেট পরীক্ষা হয়েছিল। এ বছর ২৪ ডিসেম্বর রবিবার টেট পরীক্ষা হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু বছর বছর পরীক্ষা হলেও, নিয়োগ কী হচ্ছে? সে প্রশ্ন উঠছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই হয়েছিল টেট পরীক্ষা। ৬ লক্ষ ৯০ হাজার পরীক্ষার্থী বসেছিলেন টেট পরীক্ষায়। সেই পরীক্ষায় ফর্মের দাম ছিল ১৫০ টাকা। যদিও এর শূন্যপদ এখনও বেরোয়নি। কিন্তু ২০২২ সালে টেট পরীক্ষা বাবদ পর্ষদের কোষাগারে জমা পড়ে ১০ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এ বছর টেট পরীক্ষার ফর্মের দাম ছিল ৫০০ টাকা। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লক্ষ ৯ হাজার। ২০২৩ সালে টেটর ফর্মের বাবদ ১৫ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে পর্ষদে। যদিও এর মধ্যে এসসি, এসটি পরীক্ষার্থীরাও রয়েছেন। তাঁদের ফি সাধারণ পরীক্ষার্থীদের থেকে কম দিতে হয়েছে। কিন্তু এই হিসাবে সাধারণ আবেদনকারীদের জমা দেওয়া ফি-এর উপর হিসাবে করা হয়েছে। তাই এই অঙ্কের থেকে বাস্তবের অঙ্ক কিছুটা কম হবে।
কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে চাকরি পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কয়েক জন ছাত্রী যেমন বলেছেন, “পরীক্ষা তো দিলাম। চাকরি পাব কি না জানি না। কবে নিয়োগ হবে জানি না। সরকারের উপর ভরসা নেই।” অপর একজন বলেছেন, “চাকরি তো হবে না। বেকার পরীক্ষা দেওয়া।”
এ নিয়ে বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “টেট পরীক্ষা তো এখন বাৎসরিক প্রহসন দিবস। ভাল পরীক্ষা দিয়েও দেখলেন আপনার চাকরি হল না। পাশের বাড়ির তৃণমূল নেতার থার্ড ডিভিশনে পাশ করা ছেলে চাকরি পেল।” সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “গাদা গাদা টাকা নিয়ে ফর্ম ফিল আপ করছে। সরকার রোজগারের রাস্তা দেখছে। কিন্তু চাকরি হবে কি না কেউ জানে না। টাকার বিনিময়ে যদি চাকরি হয়, প্রশ্ন বেরিয়ে যায়, তাহলে আর কী ভাবে হবে।”
যদিও এই সব অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, “রাজ্য সরকার নিয়োগের চেষ্টা করছে। কিন্তু মামলা-মোকদ্দমা করে আটকে দিয়েছেন। মামলা করে চাকরি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা।”