কলকাতা: ৪৪ ডিগ্রিতে জ্বলছে কলাইকুণ্ডা, ৪৩ ডিগ্রি সিউড়িতে। মালদহ-বালুরঘাটেও তাপপ্রবাহের থাবা। আরও ১-৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার আশঙ্কা করছে হাওয়া অফিস। অন্তত সোমবার পর্যন্ত ১৮ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা থাকছে বঙ্গে। দার্জিলিং, কালিম্পং ছাড়া বৃষ্টির আশা নেই বাংলায়। এরইমধ্যে জল সঙ্কট তীব্র হয়েছে বাংলার নানা প্রান্তে। বাড়ছে উদ্বেগ। পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলছেন, ভূগর্ভস্থ জল রিচার্জ করার কোনও প্রক্রিয়া হচ্ছে না। বৃষ্টির জল ধরে রেখে যদি আমাদের কাজে লাগানো যায় কিছুটা সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। সোজা কথায় মাটির নিচে জল বাড়ছে না। কিন্তু উল্টে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লিটার জল মাটির নিচ থেকে তোলা হচ্ছে।
স্বাতী নন্দী বলছেন, কলকাতা ও গোটা বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ভূগর্ভস্ত জল ১০ থেকে ২০ মিটারের নিচে আছে। ১০ শতাংশ এলাকায় এই জল রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ মিটারের নিচে। তাই কলকাতার অবস্থা যে খুব ভাল আছে এমনটা নয়।
সোজা কথায় পরিস্থিতি যে খুব একটা ভাল দিকে যাচ্ছে না তা বোঝাই যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন শহরের বুকে বেআইনি নির্মাণে লাগাম পড়ানো না গেলে অচিরেই বড় বিপদ নেমে আসবে। বড় বড় বিল্ডিংয়ের মধ্যে থাকা আবাসিকদেরও বালতি নিয়ে নেমে আসতে হবে রাস্তায়। খোঁজ চলবে জলের।
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রনাথ ঘোষ বলছেন, বৃষ্টির জল গাছের মধ্য দিয়ে মাটির নিচে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে গত দশ বছরে কলকাতার গাছগাছালি ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। গাছ নেই বললেই চলে। শহর ক্রমেই মরুভূমির রূপ নিচ্ছে। সে কারণেই জল গাছের মাধ্যমে মাটির তলায় যেতে পারছে না। দশ বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুকুর ভরাট হয়ে গিয়েছে। সেই জল মাটির নিচে যেতে পারছে না। যেভাবে চারদিক বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে তা ঠিক নয়। পিচ ঢালা, বাঁধানোর কাজ ঠিকভাবে হয়নি। গাছের গোড়া পর্যন্ত বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। জল নিচে যেতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে এখনও ঘুরে দাঁড়ানো যেতে পারে। চাষ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের জীবনযাপন। সব কিছুতেই বদল প্রয়োজন। আর সেটা না হলে কলকাতা খুব তাড়াতাড়ি বেঙ্গালুরুর পর্যায়ে চলে আসতে পারে। সোমেন্দ্রনাথ ঘোষ বলছেন, এইভাবে লু বইলে জলস্তর আরও কমবে। কলকাতার বড়বড় ওয়াটার বডি গুলির গভীরতা নেমে এসেছে মাত্র দুই ফিটে। রবীন্দ্র সরোবরের মতো ১৯৪ একর জলাশয়ের ওয়াটার লেভেল মাত্র দু ফুট। এগুলো আমাদের বেঙ্গালুরুর মতো অ্য়ালার্ট দিচ্ছে। এখনই সচেতন হতে হবে। না হলে দু থেকে তিন বছরের মধ্যে জল কষ্ট তীব্র হবে।