Chinese Garlic: বাংলার বাজারে ‘বিষ’ ছড়াচ্ছে চিন! ‘বিষাক্ত’ চিনা রসুন চিনবেন কী করে?
Chinese Garlic: খুচরো বাজারে ভারতীয় রসুনের দাম প্রতি কেজিতে ৩২০ টাকা। সেখানে চিনা রসুনের দাম প্রতি কেজিতে ২৫০ টাকা। দাম কম হওয়ায় অনেকেই চিনা রসুন কেনেন। কিন্তু, তার ক্ষতিকারক দিক অনেকেই জানেন না। চিনা রসুন চিনবেন কী করে? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...
কলকাতা: বাজারে গিয়ে রসুন কিনছেন। কোথায় একটু কম দামে পাওয়া যায় কি না, তার খোঁজ করছেন। কিন্তু, ভেবে দেখেছেন কী, কোন রসুন বাজার থেকে কিনে আনছেন? ভাবছেন, কোন রসুন মানে। রসুন তো রসুনই হয়। ঠিকই। বাজার থেকে রসুনই আনছেন। কিন্তু, আপনি যে রসুন বাজার থেকে কিনে এনেছেন, তা আপনার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক কি না, কখনও ভেবে দেখেছেন। আপনি যে রসুন বাজার থেকে কিনে এনেছেন, তা চিনা রসুন নয় তো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা রসুন শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। সেজন্য ভারতে চিনা রসুন নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরও বাজারে চিনা রসুন বিক্রি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বাজারগুলি পরিদর্শন করছেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা।
চিনা রসুন-
প্রধানত চিনের মাটিতে যে রসুন চাষ হয়, তাকে চিনা রসুন বলে। বিশ্বের নানা দেশ আমদানি করে এই রসুন। কিন্তু, চিনা রসুন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। চিনের কৃষকরা এই রসুন চাষে অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করেন। ফলে এই রসুন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে। সেখানে ভারতীয় রসুন চাষে খুবই কম সার ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনের রসুনে ছত্রাক রোধে মিথাইল ব্রোমাইড ব্যবহার করা হয়। আবার রসুনে ক্ষতিকারক ক্লোরিন ব্যবহার করা হয় কীট মারতে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা রসুন ব্যবহারের ফলে নিয়মিত মিথাইল ব্রোমাইট পেটে গেলে লিভার-কিডনি বিকল হতে পারে।
এই খবরটিও পড়ুন
কীভাবে চিনবেন চিনা রসুন-
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনা রসুন সাদা কিংবা গোলাপি রঙের হয়। ভারতীয় রসুন কিছুটা হলদেটে হয়। ভারতীয় রসুনের দানা সরু। সেখানে চিনা রসুনের দানা মোটা। চিনা রসুনের খোলস একটু মোটা হয়। আর ভারতীয় রসুনের খোলস পাতলা হয়।
চিনা রসুন নিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সতর্ক করতে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে একাধিক মার্কেট পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার চিনা রসুন নিষিদ্ধ করার পর মুখ্যসচিবের নির্দেশে বাজারগুলি পরিদর্শন করছি আমরা। ভিআইপি বাজার, যদুবাবুর বাজার, লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউন মার্কেট আপাতত পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে যদুবাবুর বাজার, লেক মার্কেটে চিনা রসুন পাওয়া গিয়েছে। আমরা এই নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি।”
রবীন্দ্রনাথ কোলে আরও বলেন, “সাধারণ গ্রাহকরা সতর্ক হলেও অনেক সময় হোটেল, রেস্তরাঁতে চিনা রসুন ব্যবহার করা হয়। এখন দেখতে হবে, চিনা রসুন কারা বাজারে আনছেন। পোস্তা বাজারে খোঁজখবর নিচ্ছি। যেখানে পাইকারি বাজার রয়েছে, সেখানে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সাপ্লাই লাইনটা কাটতে হবে। তাহলেই আর বাজারে পাওয়া যাবে না। সেটা কীভাবে করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।”
ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরো বাজারে ভারতীয় রসুনের দাম প্রতি কেজিতে ৩২০ টাকা। সেখানে চিনা রসুনের দাম প্রতি কেজিতে ২৫০ টাকা। দাম কম হওয়ায় অনেকেই চিনা রসুন কেনেন। কিন্তু, তার ক্ষতিকারক দিক বেশিরভাগ লোকেই জানেন না।
অভিযোগ উঠেছে যে খুচরো ব্যবসায়ীরা শিয়ালদার কোলে মার্কেট থেকে চিনা রসুন কিনে নিয়ে যান। কিন্তু, শিয়ালদা কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা আর চিনা রসুন বিক্রি করেন না। সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “মাসেকখানেক আগে আমাদের সতর্ক করা হয়। তারপর আর বিক্রি করি না।” তবে আগে এই বাজারে চিনা রসুন বিক্রি হত বলে তিনি স্বীকার করেন। কিন্তু, চিনা রসুনের ক্ষতিকারক দিক জানার পর তাঁরা এই রসুন বিক্রি বন্ধ করে দেন।
রাজু সরকার নামে কোলে মার্কেটের আর এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাজারের ভিতরে আর চিনা রসুন বিক্রি হয় না। কেউ করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। তবে বাজারের বাইরে বিক্রি হয় কি না, বলতে পারব না।” মনোজ হালদার নামে এক বিক্রেতা বলেন, “আমরা আর চিনা রসুন বিক্রি করি না।”
বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের বেশিরভাগই চিনা রসুনের বিষয়ে কিছু জানেন না। তাঁরা দোকানদার থেকে রসুন কেনেন। কোনটা চিনা রসুন, আর কোনটা ভারতীয় রসুন, অনেকেরই সেই নিয়ে কোনও ধারণা নেই। চিনা রসুনের ক্ষতিকারক দিক জানার পর এক ক্রেতা বলেন, “এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। আমাদের সজাগ হতে হবে।”
রিপোর্ট বলছে, চিনের রসুন ভারত নিষিদ্ধ করার পর নেপাল ও বাংলাদেশ হয়ে তা ভারতে ঢুকছে। এই দুই দেশ থেকে ভারতে রফতানি করা পণ্যের মধ্যে যেগুলো শুল্ক-মুক্ত, সেই তালিকায় রয়েছে রসুন। ফলে ভারতের বাজারে তুলনামূলক কম টাকায় পাওয়া যাচ্ছে চিনা রসুন। কিন্তু, সেই রসুন খেয়ে শরীরে বিষ ঢুকছে না তো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্ক হতে হবে সবাইকে। তাহলেই চিনা রসুন ভারতের বাজার থেকে আক্ষরিক অর্থে নিষিদ্ধ করা সম্ভব।