TMC Leader Murder: দু’সপ্তাহে লাশ পড়ল ৪ নেতার, চব্বিশের আগে ‘খেলা হচ্ছে’ তৃণমূল Vs তৃণমূল!
TMC Leader Murder: প্রশ্ন উঠছে, ২০২৪-এ লোকসভা, তার আগে রাজনৈতিক হিংসার বলি একাধিক। কোথায় পুলিশ? কোথায় প্রশাসন? কিন্তু সব কটি ক্ষেত্রেই একটি বিষয় অত্যন্ত 'কমন'। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছে, আর যাঁদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শাসকদলের।
কলকাতা: জয়নগর, আমডাঙা, জগদ্দল এবার সেই তালিকায় নবতম সংযোজন গোসাবা। গত ১৫ দিনে বাংলার শাসকদলের চার নেতা খুন। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বাংলায় একাধিক তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়াচ্ছে। ১৩ নভেম্বর জয়নগরে খুন হয়েছিলেন বামনগাছির উপ-পুরপ্রধান সইফুদ্দিন লস্কর, ১৬ নভেম্বর আমডাঙায় খুন হন তৃণমূলের উপ-পুরপ্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল, ২১ নভেম্বর জগদ্দলে বাড়ির সামনে খুন হন তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব, আর এবার গোসাবায় ব্লক সভাপতি মুছাকালি মোল্লা। প্রশ্ন উঠছে, ২০২৪-এ লোকসভা, তার আগে রাজনৈতিক হিংসার বলি একাধিক। কোথায় পুলিশ? কোথায় প্রশাসন?
কিন্তু সব কটি ক্ষেত্রেই একটি বিষয় অত্যন্ত ‘কমন’। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছে, আর যাঁদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই শাসকদলের। অন্তত নিহত পরিবারের অভিযোগ তাই। ইস্যুগুলি ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন। কোথাও ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ে লড়াই, আমডাঙার ক্ষেত্রে এলাকার নিয়ন্ত্রণ, হাটের জমি, টিটাগড়ের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, আর গোসাবার ক্ষেত্রে পথশ্রী প্রকল্পে কাজের বরাত নিয়ে দ্বন্দ্ব বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমানই তৃণমূলে বিবাদের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ঘটনার সময়ে। তাঁর বক্তব্য ছিল, এক তৃণমূল রয়েছে, যারা খুনোখুনির রাজনীতি করছে, আরেক ত়ৃণমূল দলের নীতি মেনে রাজনীতি করছেন। একই প্রেক্ষিতে কথা বলেছিলেন বারাকপুরের অর্জুন সিং।
১৩ নভেম্বর, ২০২৩
কালীপুজোর পরের দিনই জয়নগরের প্রত্যন্ত গ্রাম দোলুয়াখাকি বগটুইয়ের স্মৃতি ফেরার। তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর (৪৩) নামে তৃণমূল নেতাকে খুনের অভিযোগ ওঠে। ভোরে নমাজ পড়তে যাওয়ার সময়ে তাঁকে খুনের অভিযোগ ওঠে। সিসিটিভিতে ধরা পড়ে সে দৃশ্য। তারপরই গ্রামে দৌরাত্ম্য চালানোর অভিযোগ ওঠে মৃতের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গুলি করে খুনে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে পিটিয়েই মেরে ফেলা হয়। দোলুয়াখাকি গ্রামে ২০-২৫টি বাড়িতে লুঠপাট জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নিহত সইফুদ্দিনের স্ত্রী বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিল। তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লার অভিযোগ, ‘‘লোকসভা ভোটে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে জেনেই এই খুন পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে।’’
১৬ নভেম্বর, ২০২৩
জয়নগরের রেশ মিটতে না মিটতেই আমডাঙায় আরও এক তৃণমূল নেতা খুন হন। আমডাঙার তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলকে বোমা মেরে খুনের অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলেরই এক পক্ষের দাবি ছিল, হাটের জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন্দল ছিল। তার জেরেই খুন হয় বলে অভিযোগ। পরিবারের তরফ থেকে তোয়েব আলি মণ্ডল নামে এলাকারই আরেক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। উল্লেখ্য, তোয়েব এখনও পুলিশের চোখে ফেরার।
২১ নভেম্বর, ২০২৩
দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছেন ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ভিকি যাদব। তা নিয়েই শুরু হয় রাজনৈতিক চর্চা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় নাম ছিল ভিকির। বিহারে গরু-মোষ পাচারের ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছিল ভিকির। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীরা মনে করেছিল, সিন্ডিকেটের বখরা নিয়ে ঝামেলা এই খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে।
২৭ নভেম্বর, ২০২৩
গোসাবায় তৃণমূল বুথ সভাপতি মুছাকালি মোল্লাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। এক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠছে বাকিবুল নামে এলাকারই এক তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে বিবাদের জেরেই এই খুন বলে অভিযোগ করছে পরিবার।
গত দু’সপ্তাহে চার তৃণমূল নেতা খুন। এখনও প্রত্যেকটি মামলা বিচারাধীন। একের পর এক তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় সরব হচ্ছে বিরোধীরাও। বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূল লোক মারা যাচ্ছে, মারছেও তৃণমূল। ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে খুন হচ্ছে। পুরো সমাজবিরোধীদের হাতে তৃণমূল দলটা চলে গিয়েছে।”
এই পরিস্থিতি তৃণমূলের এক স্তরের নেতৃত্ব আবার কর্মীদের আত্মশুদ্ধির পাঠও দিচ্ছেন। একটি দলীয় অনুষ্ঠানে বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেছিলেন, “দলের নাম করে যদি কিছু মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য এলাকাবাসীকে ভয় দেখিয়েছেন, তাঁদের ওপর অত্যাচার করেছেন, ওই পাড়ার মানুষ যখন বুথে গিয়ে সেই লোককে দেখবেন, তখন তাঁরাই অন্য লোককে ভোট দিয়ে দেবেন। কোনও নাক কাটা, কান কাটাদের বুথে বসতে দেওয়া যাবে না।”