কলকাতা: স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন বর্তমান ও প্রাক্তনীদের একাংশ। এবার আরও এক পড়ুয়ার বক্তব্য সামনে এল। যিনি স্পষ্ট বলছেন, স্বপ্নদীপের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, খুন। যাদবপুরের মেন হোস্টেলেই থাকেন তিনি। নিরাপত্তার কারণে নিজের সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাননি ওই ছাত্র। মেন হস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে ওই ছাত্রের দাবি, এই হস্টেল থেকে জনকল্যাণে অনেক কিছুই করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এখানে যাঁরা থাকেন তাঁরা যে সকলেই র্যাগিং করেন বা র্যাগিংকে সমর্থন করেন এমনও নয়। তবে একটা সক্রিয় অংশ পরিচয়পর্ব করানোর নামে র্যাগিংয়ের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে এনে দাঁড় করান নতুন ছেলেদের। যৌনতার সুড়সুড়ির সঙ্গে চলে সিনিয়রদের মানসিক (কখনও শারীরিকও) অত্যাচার।
ওই ছাত্র তাঁর গোপন জবানিতে বলেছেন, “ইটস অ্যা মার্ডার বাই ব্লিলিয়ান্ট ব্রেনস, নট ব্রেন। সৌরভ চৌধুরীকে হয়ত আমরা আসল অপরাধী মনে করছি, কিন্তু সে হয়ত আসল অভিযুক্ত নয়। আসল অভিযুক্ত হয়ত হস্টেলেরই কোনও গ্রুপ। সৌরভ চৌধুরী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত কি না তা আমি জানি না। তবে মিডিয়ার ফোকাস পুরোপুরি সৌরভের উপর আছে। আমাদের ফোকাসটা বাড়ানো দরকার। দরকার পুলিশি তদন্তের।”
স্বপ্নদীপের সঙ্গে কী কী ঘটেছিল তা তিনি জানেন না। তবে এরকম বহু স্বপ্নদীপেরই স্বপ্নের দীপ যে এভাবেই নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মেন হস্টেলে চলে, তা স্বীকার করেন তিনি। এই ছাত্র নিজেও র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। ঠিক কীরকম র্যাগিং চলে এই মেন হস্টেলে, তাও তুলে ধরেছেন।
আসলে সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে পরিচয়পর্বের একটা ধোঁয়া তুলে এই র্যাগিংকে স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে। ওই ছাত্রের দাবি, “সিনিয়রদের জন্য ফাইফরমাস খাটা, বিড়ি, মদ, সিগারেট এনে দেওয়া, ওদের কথা পালন করা, মেস থেকে সিনিয়রদের খাবার তুলে এনে দেওয়া, জোর করে ছোট চুল কাটানো।”
ওই ছাত্র বলেন, “প্রতি রাতে নিয়মমাফিক ইনট্রো দিতে হয়। এক একটা ব্লকের এক একটা সময় আছে। কেউ ইনট্রো দিতে রাজি না হলে তাঁকে ঘর থেকে বেরও করে দেওয়া হয়। এই ইনট্রোর সময় মোবাইল ফোন রাখতে দেওয়া হয় না। বিবস্ত্র হয়ে কিংবা শুধুমাত্র অন্তর্বাসটুকু পরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নানা যৌন অঙ্গভঙ্গি, শব্দ, নাচ গান সব করতে হয়। কনকনে শীতেও খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”
এরপরই ওই ছাত্র যে দাবি করেছেন তা মারাত্মক। “মজার ছলে অনেককে উপর থেকে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য বলা হয়“, বলেন ওই ছাত্র। এমনকী ছাত্রের মা, বাবাকে নিয়েও নোংরা মন্তব্য করা হয় সেখানে, বলেন ওই ছাত্র। ‘সবকিছুরই আমি ভুক্তভোগী’, বলেন ওই ছাত্র। তাই স্বপ্নদীপের বিচার চেয়ে এগিয়ে আসতে চান তিনি।