কলকাতা: কসবা গুলিকাণ্ডের নেপথ্যে ভেড়ি ভরাট রুখে দেওয়া নাকি রয়েছে অন্য কারণ? নাকি দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব জমির বিবাদের অজুহাতের পিছনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? কসবা কাণ্ডে রীতিমত ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদলের। আর সেই ঘুম ওড়ানোর পিছনে অন্যতম কারণ যে আক্রান্ত কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষের কথামতো ‘কসবার মধু’ অর্থাৎ খালি জমি তা ক্রমে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
এই ঘটনায় কাউন্সিলার সুশান্ত ঘোষ এবং অনুগামীরা প্রথম থেকেই বড়মাথার হাত রয়েছে বলে দাবি করছিলেন। একইসঙ্গে একদা গুলশান কলোনির অন্যতম কুখ্যাত জমি কারবারি জুলকারের মদত রয়েছে বলেও দাবি উঠছিল।
আফরোজ ওরফে গুলজার খান গ্রেফতার হওয়ার পর জুলকারের যোগসাজসের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হচ্ছে বলে দাবি সুশান্ত অনুগামীদের। মহম্মদ জুলকারনাইন আলি নামে ওই ব্যবসায়ী বছর তিনেক আগে গুলশান কলোনিতে ১২০ বিঘার একটি জলাশয়ের একাংশ নিজের জমি দাবি করে আবর্জনা ফেলে ভরাট করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর হয়ে আসার পর সুশান্ত ঘোষ এবং এই গুলশান কলোনিতে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত হায়দার আলি ওই ভরা রুখে দেয়। এরপর থেকে বিবাদ চরমে ওঠে জুলকারের সঙ্গে সুশান্ত ঘোষের। আফরোজ বা গুলজার তখন জুলকারের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এদিকে জুলকারের অন্যতম সিন্ডিকেট সঙ্গী আফরোজ ওরফে গুলজার। আফরোজ বা গুলজার বছরখানেক আগে জুলকারের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট কেনে। গুলশান কলোনির দ্বারভাঙ্গা মোড়ে এল – ৭১ ঠিকানার ওই ফ্ল্যাটে গুলজার নিজের বাবা-মাকে এনে রাখে বলে দাবি। পরে গুলজার এর বাবা মারা গেলে সে নিজের মা বোন এবং ভগ্নিপতিকে নিয়ে বিহার চলে যায়। ওই ফ্ল্যাট দুটিতে ভাড়া বসিয়ে দেয়।
একই সঙ্গে জুলকারের কাছ থেকে গুলজার ওই ফ্ল্যাটের তলায় ২ হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গা কিনে সেখানে গোডাউন তৈরি করে। এই গোডাউন বা ফাঁকা জায়গা ঘিরে যত বিতর্ক। গুলজার গ্রেফতারের সময় দাবি করে, ওই দুই হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গা দখল করে রেখেছে সুশান্ত ঘোষ।
এমনকি গুলজার ওই জায়গা দখমুক্ত করতে গেলে হায়দার আলি এবং বাকি লোকজনের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল বলেও জুলকার এদের দাবি করে। এদিকে সুশান্ত ঘোষ, হায়দার আলি-সহ বাকিদের দাবি, এই এলাকায় কেউ কোনো দখলের অভিযোগ করে না। যে যার নিজের ঠিকানায় থাকে।
গুলজার খান যদি ওই জমির মালিক হয়ে থাকে তাহলে কাগজ দেখাক। ওই গোডাউনের মালিক অন্য। জোর করে জুলকার ওই জায়গা দখল করে গুলজারকে দিয়ে দেয়। সিন্ডিকেট কারবারির সদস্য তাই বেআইনি কাজ করে জুলকার।
যদিও শুধুমাত্র ওই গোডাউন দখলের পেছনে রয়েছে তা নয়। ভেরি ভরাট রুখে ১০০ কোটি টাকার জুলকারের বেআইনি কারবার আটকে দিয়েছিল সুশান্ত ঘোষ। আর তখন থেকেই রাগে ফুঁসছিল ছিল গুলজার। নিজের সহযোদ্ধার কাজ আটকে দেওয়ায় সুশান্তের ওপর অনেক আগে থেকেই নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা কষে নিয়েছিল গুলজার।
সেটাই দীর্ঘদিন পর বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিল আফরোজ। পিছনে কি তাহলে জুলকারের হাত? নাকি আরও বড় মাথা এই ঘটনার দড়ি ধরে রেখেছে? এটাই এখন এই ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় প্রশ্ন।