
কলকাতা: আজ তপ্ত বাংলা। জেলা থেকে রাজপথ। রাস্তায় নেমেছেন চাকরিহারারা। নিজের ‘যোগ্য’তার বিচার চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চেয়েছিলেন। আর তাতেই পিঠে পড়ল পুলিশের ঘা। চাকরিহারাদেরই লাঠিপেটা করল পুলিশ, চলল ধরপাকড়! চাকরিহারাদের পাল্টা হুঙ্কার, ‘টেনে নামব এই সরকারকে’।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক লহমায় চাকরিচ্যুত হয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বস্তে একটুও আশ্বস্ত হননি চাকরিহারা। উল্টে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়ার পরামর্শে বেড়েছে ক্ষোভের আগুন! বুধবার রাজ্য জুড়ে ডিআই অফিস ঘেরাও অভিযানে নামেন চাকরিহারারা। আর তাতেই ধরা পড়ে বিপন্নতার ছবি। কসবায় চাকরিহারা মিছিল করে ডিআই অফিসের উদ্দেশে আসছিলেন। ডিআই অফিসের কাছে আসতেই পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। পুলিশ টেনে হিঁচড়ে চাকরিহারাদের সরানোর চেষ্টা করে। পড়ে যান বেশ কয়েকজন। ওই অবস্থাতেই লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকজন লাঠির আঘাতে গুরুতর চোট পান। মহিলাদেরও লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে ডিআই অফিসের সামনেই শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন চাকরিহারারা। এক চাকরিহারা অচৈতন্য হয়ে পড়েন।
এলাকায় বাড়ানো হয় পুলিশের সংখ্যা। পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তারা চলে আসেন। ক্ষোভের আগুন বাড়তে থাকে তড়তড়িয়ে।
এক চাকরিহারা বললেন, “পয়সা ছাড়া একটা কাজ হয় না, একটা ফাইল এটেবিল থেকে ওটেবিল যায় না। যে কোনও ফাইল। পেনশন হোক, যা হোক… এখন ওরা বসে বসে মজা নিচ্ছেন।” আরেক চাকরিহারা বলেন, “ডিআই-ও ঘুষ খান। আমরা জঙ্গি নই, আমাদের কেন লাঠিপেটা? আমরা কি অস্ত্র নিয়ে এসেছিলাম? কার নির্দেশে এমনটা হল?” আরেক চাকরিহারা শিক্ষক অনিশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এত তো ভিডিয়ো হচ্ছে, দেখান তো কোথাও আমরা ভায়োলেন্ট হয়েছি? আজ আমরা শিক্ষক হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, হাতে পেন কোথায়? ছাত্রদের চোখে চোখ রাখতে পারছি না।”
পাঁচশো টাকার নোট হাতে নিয়ে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন চাকরিহারারা। এক চাকরিহারা বলেন, “পুলিশ ঘুষ দেবো, ঘুষ… আমাদের দেখা করতে দিন। আমরা পুলিশকে ঘুষ দিতে চাইছে। আমাদের ওপর অন্যায় হয়ে আসছে।”
আরেক চাকরিহারা বলেন, “ঘুষখোরদের ঘুষই দেব। যোগ্যতার, শিক্ষার যেখানে কোও মূল্য নেই, সেখানে টাকারই মূল্য!” আরেক শিক্ষক বলেন, “আমাদের ভেরিফিকেশনের সময়েও ওরা টাকা ডিমান্ড করেছিল। আমাদের যোগ্য শিক্ষকরা যারা পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য প্রস্তুত ছিল, তখনও টাকা ডিমান্ড করেছিল। কারোর পাঁচশো টাকা, কারোর ১০০০ টাকা দাবি করেছিল। এখন ওরা ২ টাকা ঘুষের যোগ্য।”