বাবা গত বছরই জানতে পারেন ছেলে আইএএস নন! তারপর আরও বেপরোয়া দেবাঞ্জন

গত বছরই নাকি দেবাঞ্জনের (Debanjan Deb) বাবা জানতে পারেন, তাঁরা ছেলে আইএএস নন। তাঁর বাড়ি তল্লাশি করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তিনটি ডেবিট কার্ড, ব্যাঙ্কের আরও কয়েকটি পাসবই।

বাবা গত বছরই জানতে পারেন ছেলে আইএএস নন! তারপর আরও বেপরোয়া দেবাঞ্জন
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 28, 2021 | 11:54 AM

সায়ন্ত ভট্টাচার্য: টিকা জালিয়াত চক্রের (Kasba Fake Vaccination Camp) মূল চক্রী দেবাঞ্জন দেব (Debanjan Deb) সম্পর্কে উঠে এল আরও এক তথ্য। অশোক রায় নামে জনৈক এক ব্যক্তির কাছ থেকে কসবার অফিস ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দেব। ২০২০ সালে মাসিক ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অফিস ঘর ভাড়া নেওয়া হয়। এর আগেও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়ের হয় ইলেক্ট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায়।

গত বছরই নাকি দেবাঞ্জনের বাবা জানতে পারেন, তাঁরা ছেলে আইএএস নন।  সে সময় তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন। ছেলে ভুয়ো আইএএস জানার পরও বাধ সাধেননি তিনি। বরং এরপর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন দেবাঞ্জন। বিছোতে থাকেন একের পর এক জাল। রবিবারই দেবাঞ্জনকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। তাঁর বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, ভ্যাকসিনের লেভেল উদ্ধার হয়েছে।

দেবাঞ্জনের কসবার অফিসও সিল করে দিয়েছে পুলিশ।  কসবা ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে ধৃত দেবাঞ্জনের তিন তলা বাড়িতে মোট আটটি ঘর রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি ঘর দেবাঞ্জনের। সেই ঘরগুলোতে দেবাঞ্জন কাউকে ঢুকতে দিতেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে তালা বন্ধ থাকত ঘরগুলি।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে দেবাঞ্জন ব্যাঙ্কের কাছে যে বয়ান দিতেন, তা পুরসভার আসল বয়ানের সঙ্গে হুবহু মিলে গিয়েছে। অর্থাৎ পুরসভাও অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে যে বয়ান ব্যাঙ্কে দিয়ে থাকেন, সেই একই রকম বয়ান দেবাঞ্জন ব্যবহার করেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে সেটা সম্ভব? তাহলে কি সেই বয়ানের আসল কপি কেউ দেবাঞ্জনের কাছে পৌঁছে দিতেন?

কলকাতা পুরসভার ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতা ছাড়াও. উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাঁর প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সুশান্ত দাস নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দেবাঞ্জনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শোভাবাজারে একটি অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করতেন সুশান্ত। জানা গিয়েছে, কসবার যে বাড়িতে অফিস রুম ভাড়া নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন, সেই মালিকেরই হয়ে আগে কাজ করতেন সুশান্ত। পরে দেবাঞ্জনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সুশান্ত ঘোষ পরবর্তী কালে পুরসভার ডেপুটি ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। পরবর্তীকালে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন: ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে একের পর এক ‘তথ্য প্রমাণ লোপাট’, আসরে বিজেপি

এদিকে, টিকা জালিয়াতি কাণ্ডে ইতিমধ্যেই লেগেছে রাজনীতির রঙ। ধৃত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে প্রভাবশালী যোগ থাকার সূত্র খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেবাঞ্জন দেবের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে বিতর্ক আরও বেড়েছে। অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। এরই মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর টুইট খোঁচা। আর তারপরই বিজেপি নেতা অমিত মালব্যর টুইট। প্রতিবাদে সোচ্চার লকেট চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু। বিজেপির আরও অভিযোগ, এই ঘটনার পুরোদস্তুর প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চলছে।