KMC: জলের অপচয় বাঁচাতে কলকাতায় কোটি কোটি টাকা খরচ, অথচ জলেই গেল!

KMC: সম্প্রতি কলকাতা পুরনিগমে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কেইআইআইপি ট্রাঞ্চ-২ নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। পর্যালোচনার সেই বৈঠকে দেখা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণে ট্রাঞ্চ-২ তে শহরের পূর্বাংশ এবং দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন অংশে পুরসভা উন্নত করতে ১৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

KMC: জলের অপচয় বাঁচাতে কলকাতায় কোটি কোটি টাকা খরচ, অথচ জলেই গেল!
মিটার বসিয়েও লাভ হচ্ছে না। Image Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: সায়নী জোয়ারদার

Jul 08, 2024 | 3:52 PM

কলকাতা: কোষাগারে টাকা নেই। অথচ পরিকল্পনা ছাড়াই ঋণের টাকায় জলের মিটার বসিয়ে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ উঠল কলকাতা পুরনিগমের বিরুদ্ধে। এখন আবার সেই মিটারগুলি খুলে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে খবর পুরসভার অন্দরের। কোটি কোটি টাকায় বসানো হয়েছিল জলের মিটার। জল অপচয় রুখতে তা বসানো হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ছিল না বলে অভিযোগ। তাতেই বিপুল টাকা জলে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণের কোটি টাকায় জলের চাপ পরিমাপের জন্য এবং অপব্যয় রুখতে বসানো হয়েছিল এই মিটার। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট। জলের মিটার বসানো এবং ওই এলাকায় জলের পাইপ মেরামত-সহ একাধিক কাজের জন্য খরচ হয় ১৪৪.৫৩ কোটি টাকা। ১০৭, ১০৮, ১০১ ও ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে ১০ হাজারের বেশি বাড়িতে এই মিটার বসানো হয়েছিল। বিরোধীরা বলছে, আগাম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করে এসব করেছে।

সম্প্রতি কলকাতা পুরনিগমে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কেইআইআইপি ট্রাঞ্চ-২ নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। পর্যালোচনার সেই বৈঠকে দেখা যায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের ঋণে ট্রাঞ্চ-২ তে শহরের পূর্বাংশ এবং দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন অংশে পুরসভা উন্নত করতে ১৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

কিন্তু সেই কাজগুলির গতি এবং বাস্তবায়ন রীতিমতো হতাশাজনক। কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের নিজস্ব সমন্বয়ের অভাবে কাজগুলি অর্ধেক শেষ হয়ে পড়ে রয়েছে। বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ব্যাপকভাবে ক্ষোভ দেখান কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আধিকারিকদের উপরে বলেও সূত্রের খবর।

বৈঠকে এই মিটারগুলির কাজকর্ম পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেখা যায়, যে ধরনের জলের চাপ থাকলে মিটারের চাকা ঘুরবে নির্দিষ্ট গতিতে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিতে জলের সেই চাপই নেই। এমনকী জল অপব্যয় রোখার উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হচ্ছে। অপব্যয় পরিমাপ করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।

বরো ১২ তে তিনটি ওয়ার্ড এবং ১১ নম্বর বরোর একটি ওয়ার্ডেই এই কাজ বছর কয়েক আগে শুরু হয়েছিল। সেখানে বাড়িতে মিটার বসে গেলেও তাতে কোনও লাভের লাভ হচ্ছে না বলেই পুরনিগমের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে উঠে আসে। যে কারণে মেয়র ওই মিটারগুলি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন বলেও খবর। ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হবে, সেটা আঁচ করতে পারলেও অযথা মিটার বসিয়ে রাখতে চান না মেয়র।

১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের কথায়, “যার উপর ভিত্তি করে এই ধাপা জল প্রকল্প তৈরি করা হয়, সেই জনসংখ্যা প্রায় আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। যতটা পরিমাণ জল এই অঞ্চলের জন্য ধরা হয়েছিল, খরচ বেড়ে গিয়েছে। ফলে জলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।”

বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ শাসক শিবিরকে খোঁচা দিয়ে বলেন, “মিটারটা ঘুরতে গেলে জলের যে ফোর্স দরকার সেটাই নেই।” অন্যদিকে সিপিএম নেতা চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে শুধুমাত্র লোক দেখানো কাজ করলে এমন যে হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।”

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, কেন পরিকল্পনা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পথে এই উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে না? কেন ঋণ বাবদ পাওয়া কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে এই ধরণের কাজ না হওয়ায়? কেন সঠিক নজরদারি রাখা হচ্ছিল না? এ বিষয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বলে দিয়েছি যে জলের চাপ বাড়ুক আগে। আপাতত মিটারগুলি সরিয়ে দিতে। তারপর আমরা দেখব। মিটার বসানোর উদ্দেশ্য জল যাতে অপচয় না হয়। ওখানে প্রয়োজন নেই যখন কেন শুধু শুধু বসাতে যাব।”