
কলকাতা: ঠিক আট মাস আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এবার কি প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হবে? নাকি থাকবে? আজ (বুধবার) সবার নজর কলকাতা হাইকোর্টের দিকে। দুপুুর ২টায় প্রাথমিক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই রায়ের আগে জেনে নেওয়া যাক প্রাথমিক নিয়োগ মামলার আগাপাছতলা। মামলাকারীদের কী অভিযোগ? রাজ্যের কী যুক্তি?
২০১৪ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। তারপর হয় টেট। তার ভিত্তিতে ২ বার নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে। ৪২ হাজার ৫০০ জনের বেশি শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। আর ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। ২০২৩ সালের ১২ মে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টে মামলাকারীদের কী কী অভিযোগ?
প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ ওঠে। মামলাকারীদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের নিয়োগের আইন মানা হয়নি। দ্বিতীয়ত, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ বিধি মানা হয়নি। তৃতীয়ত, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও সিলেকশন কমিটি ছিল না। থার্ড পার্টি এজেন্সি প্যানেল তৈরি করেছিল। চতুর্থত, অ্যাপটিটিউট টেস্ট নেওয়া হয়নি। পঞ্চমত, অ্যাপটিটিউট টেস্টের কোনও গাইডলাইনই ছিল না। এছাড়াও মামলাকারীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়। কাট অব মার্কস নিয়ে উপযুক্ত তথ্য ছিল না বোর্ডের কাছে। শূন্যপদের অতিরিক্ত নিয়োগ হয়। এবং ন্যূনতম যোগ্যতা নেই, এমন প্রার্থীরাও চাকরি পান।
রাজ্য কী যুক্তি দেয়?
প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে রাজ্য সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। রাজ্য যুক্তি দেয়, দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। তবে কিছু বেনিয়ম হয়েছে বলে স্বীকার করে। পরে তা সংশোধনও করা হয়েছে বলে রাজ্যের দাবি।
কী নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?
প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় ২০২৩ সালের ১২ মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে তাঁদের পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। এই হারে চার মাস বেতন পাবেন তাঁরা। সিলেকশন প্রসিডিওরেরও কথা বলেছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। যেখানে ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরাও প্রত্যেকে আবেদন করতে পারবেন। বেছে নেওয়া হবে যোগ্যদের। নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
সিঙ্গল বেঞ্চের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত রায়ের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নতুন করে নিয়োগ শুরু করতে হবে। এরপর ফের ওই দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম দুয়ারে যায় রাজ্য ও পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্ট তখন মামলা ফেরায় হাইকোর্টে। ডিভিশন বেঞ্চকে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষের বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে মামলা শোনে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। গত ১২ নভেম্বর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি শেষ হয়। রায় দান স্থগিত রেখেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। আজ (বুধবার) সেই রায় দেবে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
সেই রায়ের দিকে তাকিয়ে সবাই। প্রাথমিকে কর্মরত শিক্ষকরা বলছেন, বেনিয়মের জন্য তাঁরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন? প্রয়োজনে পর্ষদকে বাদ দিয়ে অন্য কোনও পক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় করুক। আবার টেট পাশ আবেদনকারীদের এক পক্ষের দাবি, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত। পুরোটাই বাতিল করা হোক। এই অবস্থায় ডিভিশন বেঞ্চ কী রায় দেয়, সেটাই এখন দেখার।