সায়ন্ত ভট্টাচার্য: বায়ুদূষণের কালো ছায়ায় কার্যত ঢেকে রয়েছে গোটা শহর। শহরের আকাশে এখন এই বায়ুদূষণ নতুন উদ্বেগের মেঘ তৈরি করেছে। দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতা বায়ু দূষণের তালিকায় প্রথম পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এই বায়ুদূষণ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত কলকাতার পুর প্রশাসন। শহরের বায়ু দূষণ কমাতে প্রকাশ্যে জঞ্জাল আবর্জনায় আগুন জালানো বা ফুটপাথে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার ব্যাপারে একাধিক বিধি নিষেধ জারি করেছিল পুর প্রশাসন। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা বা বিধি-নিষেধ মানা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে কোনও নজরদারি নেই। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা আজ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে মহানগরে।
বৃক্ষছেদন এবং অবৈধ ট্যানারির দাপটে গোটা কলকাতার বাসিন্দারা দূষণে নাভিশ্বাস ফেলছে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি পুরসভার অধিবেশন শেষে জানিয়েছিলেন, কলকাতা পুরসভা কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হলে, কলকাতার বায়ুদূষণের পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ ব্যাপারে তিনি কাউন্সিলরদের পুরস্কৃত করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু মেয়র এই বিষয়টি নিয়ে ভাবলেও আদতে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। জনপ্রতিনিধিদের একাংশের কথায়, কাউন্সিলরদের এত ক্ষমতা নেই যে নিজ নিজ ওয়ার্ডে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলবে। শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ করলেই, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। যে ভাবে পুরনো গাড়ির ধোঁয়া বেড়েছে এবং শহরের পূর্ব অংশে অবৈধ ট্যানারি এবং খাটাল বেড়েছে, সেগুলো নিয়ে কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা কী ভাবে কমানো যায়, তার দিশা পেতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করে কলকাতা পুরসভা। কমিটিতে ছিলেন আইআইটি খড়গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা, ছিলেন পুর আধিকারিকেরাও। ঠিক হয়েছিল, কমিটি বায়ুদূষণ রোধে ১৫ দিনের মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদি এবং ৪৫ দিন, অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রিপোর্ট জমা দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কমিটি গঠনের দেড় বছর পরেও পুরসভায় জমা পড়েনি সেই রিপোর্ট।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি করোনা অতিমারির আগে বৈঠকে বসেছিল একাধিক বার। সেই সময়ে কমিটির তরফে শহরের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পর্যালোচনা পুরসভার কাছে তুলে ধরা হলেও চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। গত মার্চ-এপ্রিলে কমিটির সদস্যরা ফের বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এমনিতে করোনা অতিমারির জেরে লকডাউনের কারণে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিশ্ব জুড়েই বায়ুদূষণের মাত্রা তুলনায় কম। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৭ শতাংশ কম হয়েছে।
সূক্ষ্ম ভাসমান শ্বাস বাহিত ধূলিকণার মাত্রা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রো গ্রামের বেশি থাকলে বিপদ। কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রো গ্রামের বেশি ধূলিকণা থাকলেই বিপদ। অথচ কলকাতায় রয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ৩০০ মাইক্রো গ্রাম ধূলিকণা। সে দিক দিয়ে দেখলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী অনেকটাই বেশি রয়েছে কলকাতায়, যা বিপদসীমার ওপরে।
বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। সুইৎজারল্যান্ডের পরিবেশ সংগঠন আইকিউ এয়ার যে তালিকা দিয়েছে তাতে পৃথিবীর বায়ুদূষণে কলকাতার স্থান চতুর্থ। এই সংগঠনটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রাযুক্তিক সহযোগী। বাতাসে দূষণের পরিমাপ মেপে তারা দেখিয়েছে, প্রথম ১০ বিষাক্ত বাতাসের শহরে আছে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) দিয়ে বাতাসে দূষণের পরিমাপ করা হয়। ভূমি স্তরের ওজোন, পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ মেপে এই সূচক তৈরি হয়। যত তার পরিমাণ বেশি হবে, তত খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর হবে পরিবেশ। আইকিউ এয়ারের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ ১০ শহরের শীর্ষেই আছে দিল্লি (একিউআই ৫৫৬)। দ্বিতীয় পাকিস্তানের লাহোর, তৃতীয় বুলগেরিয়ার সোফিয়া, চতুর্থ কলকাতা (একিউআই ১৭৭)। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব, ষষ্ঠ মুম্বই (একিউআই ১৬৯)। সপ্তম স্থানে রয়েছে সার্বিয়ার বেলগ্রেড, অষ্টমে চিনের চেংদু, নবমে উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপজে, দশম পোল্যান্ডের ক্র্যাকো।
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
বাংলা টেলিভিশনে প্রথমবার, দেখুন TV9 বাঙালিয়ানা
সায়ন্ত ভট্টাচার্য: বায়ুদূষণের কালো ছায়ায় কার্যত ঢেকে রয়েছে গোটা শহর। শহরের আকাশে এখন এই বায়ুদূষণ নতুন উদ্বেগের মেঘ তৈরি করেছে। দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতা বায়ু দূষণের তালিকায় প্রথম পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। এই বায়ুদূষণ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত কলকাতার পুর প্রশাসন। শহরের বায়ু দূষণ কমাতে প্রকাশ্যে জঞ্জাল আবর্জনায় আগুন জালানো বা ফুটপাথে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার ব্যাপারে একাধিক বিধি নিষেধ জারি করেছিল পুর প্রশাসন। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা বা বিধি-নিষেধ মানা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে কোনও নজরদারি নেই। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা আজ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে মহানগরে।
বৃক্ষছেদন এবং অবৈধ ট্যানারির দাপটে গোটা কলকাতার বাসিন্দারা দূষণে নাভিশ্বাস ফেলছে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি পুরসভার অধিবেশন শেষে জানিয়েছিলেন, কলকাতা পুরসভা কাউন্সিলররা নিজ নিজ ওয়ার্ডে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হলে, কলকাতার বায়ুদূষণের পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ ব্যাপারে তিনি কাউন্সিলরদের পুরস্কৃত করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু মেয়র এই বিষয়টি নিয়ে ভাবলেও আদতে তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। জনপ্রতিনিধিদের একাংশের কথায়, কাউন্সিলরদের এত ক্ষমতা নেই যে নিজ নিজ ওয়ার্ডে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলবে। শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ করলেই, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। যে ভাবে পুরনো গাড়ির ধোঁয়া বেড়েছে এবং শহরের পূর্ব অংশে অবৈধ ট্যানারি এবং খাটাল বেড়েছে, সেগুলো নিয়ে কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শহরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা কী ভাবে কমানো যায়, তার দিশা পেতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করে কলকাতা পুরসভা। কমিটিতে ছিলেন আইআইটি খড়গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা, ছিলেন পুর আধিকারিকেরাও। ঠিক হয়েছিল, কমিটি বায়ুদূষণ রোধে ১৫ দিনের মধ্যে একটি স্বল্পমেয়াদি এবং ৪৫ দিন, অর্থাৎ দেড় মাসের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার রিপোর্ট জমা দেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কমিটি গঠনের দেড় বছর পরেও পুরসভায় জমা পড়েনি সেই রিপোর্ট।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি করোনা অতিমারির আগে বৈঠকে বসেছিল একাধিক বার। সেই সময়ে কমিটির তরফে শহরের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পর্যালোচনা পুরসভার কাছে তুলে ধরা হলেও চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। গত মার্চ-এপ্রিলে কমিটির সদস্যরা ফের বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এমনিতে করোনা অতিমারির জেরে লকডাউনের কারণে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিশ্ব জুড়েই বায়ুদূষণের মাত্রা তুলনায় কম। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৭ শতাংশ কম হয়েছে।
সূক্ষ্ম ভাসমান শ্বাস বাহিত ধূলিকণার মাত্রা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রো গ্রামের বেশি থাকলে বিপদ। কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রো গ্রামের বেশি ধূলিকণা থাকলেই বিপদ। অথচ কলকাতায় রয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ৩০০ মাইক্রো গ্রাম ধূলিকণা। সে দিক দিয়ে দেখলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা কেন্দ্রীয় সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী অনেকটাই বেশি রয়েছে কলকাতায়, যা বিপদসীমার ওপরে।
বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। সুইৎজারল্যান্ডের পরিবেশ সংগঠন আইকিউ এয়ার যে তালিকা দিয়েছে তাতে পৃথিবীর বায়ুদূষণে কলকাতার স্থান চতুর্থ। এই সংগঠনটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রাযুক্তিক সহযোগী। বাতাসে দূষণের পরিমাপ মেপে তারা দেখিয়েছে, প্রথম ১০ বিষাক্ত বাতাসের শহরে আছে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) দিয়ে বাতাসে দূষণের পরিমাপ করা হয়। ভূমি স্তরের ওজোন, পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ মেপে এই সূচক তৈরি হয়। যত তার পরিমাণ বেশি হবে, তত খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর হবে পরিবেশ। আইকিউ এয়ারের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ ১০ শহরের শীর্ষেই আছে দিল্লি (একিউআই ৫৫৬)। দ্বিতীয় পাকিস্তানের লাহোর, তৃতীয় বুলগেরিয়ার সোফিয়া, চতুর্থ কলকাতা (একিউআই ১৭৭)। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব, ষষ্ঠ মুম্বই (একিউআই ১৬৯)। সপ্তম স্থানে রয়েছে সার্বিয়ার বেলগ্রেড, অষ্টমে চিনের চেংদু, নবমে উত্তর ম্যাসিডোনিয়ার স্কোপজে, দশম পোল্যান্ডের ক্র্যাকো।