কলকাতা: গাড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) স্টিকার লাগানো আর নীল বাতি। নিজের ফ্ল্যাটের নীচেই দফতর। বরানগরের অভিজাত আবাসন চত্বরের চর্তুদিকে তাঁর হেবি নামডাক। বিশাল প্রভাব। সকলেই ডাকেন ‘স্যার’ বলে! কিন্তু সেই স্যারের আসল চেহারা আজ সামনে আসতেই হতচকিত গোটা পাড়া। দেবাঞ্জনের মতো আরও কত ‘ভুয়ো আধিকারিক’ শহরের বুকে ঘাপটি মেরে রয়েছেন, তারই প্রমাণ মিলল আজ। গড়িয়াহাট পুলিশের হাতে গ্রেফতার আরও এক ভুয়ো সরকারি অফিসার সনাতন রায়চৌধুরী (Sanatan Roy Chowdhury)।
বরানগরের মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা সনাতন। নিজেকে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য বলে পরিচয় দিতেন সনাতন। নীল বাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় প্রভাব খাটিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু গত ২৫ জুন করে বসেন একটি ভুল। তালতলা থানায় ফোন করেন সনাতন। নিজের পরিচয় দেন মুখ্যমন্ত্রী উপদেষ্টা দফতরের আধিকারিক হিসাবে। তালতলা থানার ওসিকে বলেন, তিনি একজনকে পাঠাচ্ছেন। তাঁর কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি দেখে নেওয়া জন্য়। ওসিকে রীতিমতো প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন তিনি।
কিন্তু স্রেফ একটা জায়গাতেই বিষয়টা ধরে ফেলেছিলেন। সনাতন যে পদের কথা বলেন, সেরকম কোনও পদ আদতে নেই। তারপরই সনাতনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেন তালতলা থানার ওসি। ঠিক তার পাঁচ দিন পর আরও একটি অভিযোগ। এক্ষেত্রে সনাতনের বিরুদ্ধে গড়িয়াহাটের ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল ও সিবিআইয়ের আইনজীবীর পরিচয় দিয়ে গড়িয়াহাট থানা এলাকায় ওই ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেন ওই আইনজীবী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। সামনে আসে তালতলা থানার কেসটিও। কিন্তু দেবাঞ্জনের কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নিজের নীল বাতি লাগানো গাড়িটি নিয়ে খুব বেশি বেরোতেন না তিনি। গড়িয়াহাটে এদিন যেতেই পুলিশের জালে পড়েন তিনি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে নীল বাতি লাগানো গাড়ি। সনাতনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দেবাঞ্জনের মতো প্রভাবশালী যোগের অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যেই রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে তাঁর একটি ছবি প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
আরও পড়ুন: গাড়িতে নীল বাতি- কলকাতা হাইকোর্টের স্টিকার! শহরে ফের জালে ‘জালিয়াত’
প্রসঙ্গত দেবাঞ্জন কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরকম ভুয়ো সরকারি আধিকারিকদের পর্দাফাঁস হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগেই বেনিয়াপুকুর থানার নিউ পার্কস্ট্রিট এলাকায় এ ধরনের একটি লাল গাড়ি দাঁড় করান পুলিশ কর্তারা। তাতে নীল বাতি লাগানো ছিল। গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ সাদিক নামে এক যুবক। তিনিও নিজেকে উচ্চ পদস্থ সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। এদিকে, সোমবারই নদিয়ায় ভুয়ো সিআইডি অফিসারের হদিশ মিলেছে। ওই মহিলা অফিসারের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগও উঠেছে।