
কলকাতা: ধরুন প্রায় প্রতিদিনের মতোই নিজের স্থানীয় এটিএমে টাকা তুলতে গেলেন আপনি। প্রথমেই গিয়ে মেশিনে নিজের নির্দিষ্ট কার্ডটি ঢোকাবেন নিশ্চয়ই। আর তখনই ঘটবে বিপত্তি। হঠাৎ করে মেশিনেই আটকা পড়বে আপনার কার্ড। চিন্তার বশে চারপাশ তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ফোন করবেন হেল্পলাইন নম্বরে। কার্ড বের করতে তারা আপনাকে পিনকোড দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। আর সেটা দিলেই, নিজেদের শেষ চালটা খেলে দেবে দুষ্কৃতীরা। মিনিটের মধ্য়ে আপনার ব্যাঙ্ক থেকে উধাও হবে টাকা। ধাপে ধাপে চলে যাবে প্রতারকের পকেটে।
খাস কলকাতায় এখন পাতা হচ্ছে এমনই ফাঁদ। কারা পাতছে? হঠাৎ করে কোথা থেকেই বা হাজির হল তারা? সবই তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। গতকাল দক্ষিণ কলকাতার সার্ভে পার্ক থানা এলাকায় ঘটে যায় এমন ঘটনা। সেখানকার কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী একটি এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে কষ্টার্জিত উপার্জন খোয়ালেন এক ব্যক্তি।
সাইবার প্রতারণার পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলা হচ্ছে এটিএম কার্ড স্কিমিং। কী ভাবে হয় এই প্রতারণা? জানা যাচ্ছে, খুব ছোট্ট ডিভাইস মেশিনে ঢোকানো থাকে, একদম কার্ড ঢোকানোর জায়গায়। আপনি নিজের ডেবিট কার্ড ঢোকালেই, আপনার কার্ডটিকে লক করে দেয় সেই প্রতারণা ডিভাইসটি। সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা। চাপে পড়ে ফোন করেন হেল্পলাইনে।
সেখান থেকে বলা হয়, পিন কোড প্রেস করতে। আর এভাবেই আপনার কার্ডের গোপন পিনকোড জেনে নেয় জালিয়াতরা। ভেতরে লাগানো ‘প্রতারণা ডিভাইস’ কার্ডের দুটো পিঠ স্ক্যান করে নেয়। তারপর আর কি? ধাপে ধাপে ব্যাঙ্ক থেকে উধাও সব টাকা।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগেও এমন একটি ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। বারবার এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে কষ্টার্জিত সব উপার্জন খোয়াচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। তখনই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে লালবাজার সাইবার দফতর। গ্রেফতার করা হয় একটি রোমানিয়ান গ্যাং-কে। এবার প্রশ্ন উঠছে নতুন করে কি আবার কলকাতার বুকে মাথা চাড়া দিয়েছে তারা? নাকি তাদের কায়দাতেই নতুন ফাঁদ পাতছে অন্য কোনও দুষ্কৃতীদের দল? উত্তর এখনও অধরা।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই সাইবার প্রতারণা তদন্তে বড় সাফল্য পেয়েছে রাজ্য। কলকাতা পুলিশের অপারেশন ‘সাইবার শক্তি’র আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৪৬ জন প্রতারককে। ধরা খেয়েছে জামতাড়া গ্যাংয়েরও কিছু সদস্য। আর সেই সবের মাঝেই আবার বঙ্গে যেন মাথাচাড়া দিচ্ছে রোমানিয়ান ‘ডিজিটাল ডাকাত’রা।