শুভেন্দু দেবনাথ:পুজো তো বড়লোকেদের। আমাদের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। দেখছো না ছেলেমেয়েদের জামা কাপড়টাও কিনে দিতে পারিনি। রাস্তায় ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ মায়ের পুজোর দিনে ক্ষোভ উগরে দেন আরেক মা। উমা এসেছেন বাপের বাড়ি। সেই আনন্দে বাঙালি মেতে উঠেছে সারা বিশ্বে। কিন্তু বাস্তবের এই উমার কোনও বাপের বাড়িই নেই। শুধু বাপের বাড়ি কেন, কোনও বাড়িই নেই তাঁর। এমনকী নামটাও ধার করা। উমা আজ পরভিন বিবি।
সেই কোন ছেলেবেলায় কীভাবে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনে নেই। শুধু মনে আছে, বাবা মা নেই, নানীর কাছে মানুষ। দশ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। কীভাবে পৌঁছে যান দিল্লির একটি হোমে তাও মনে নেই। হোম থেকে হোমে বদল হতে হতে একদিন পৌঁছে যান বারাসতের একটি হোমে। সেখানেই পরিচয় হয় আরেক পরভিনের সঙ্গে। তাকেও একদিন লোকের বাড়ি থেকে কাজ করে ফেরার সময় অনাথ ভেবে তুলে নেয় হোমের লোকেরা।
বছর পনেরোর দুই কিশোরীর বন্ধুত্ব হয় হোমেই। নামহীন এক কিশোরীকে নিজের নাম ধার দেয় পরভিন। শর্ত দেয় হোম থেকে পালাতে সাহায্য করলে তাঁর একটি নিজের ঘর হবে। একদিন দুই বন্ধু পালিয়ে যায় হোম থেকে। এখান থেকেই এক নতুন অধ্যায় শুরু হয় ছেলেবেলায় ‘ঘর’ হারানো ‘উমা’র।
কথা মতো বন্ধুটি নিজের ঘরে আশ্রয় দেয় তাঁকে। পরভিনের দাদাকে বিয়ে করে সতীনের সংসার শুরু করেন তিনি। বদলে যায় জীবন। সুখের দিকে নয় আরও এক অন্ধকারের দিকে। স্বামী সতীন নিয়ে বাস হাওড়া ময়দানে। স্বামী গাছ কাটে। কিন্তু কোভিড এবং বর্ষায় সে কাজ বন্ধ। স্বামী ঘর থেকে বেরতে দেয় না। অগত্যা নতুন মা শাশুড়িই ভরসা। দুই সন্তানকে নিয়ে সে চলে এসেছে লেকটাউন ফুটব্রিজের নীচে শাশুড়ির ‘উড়ালপুলের’ সংসারে। কারণ পুজো আচ্চার দিনে বাচ্চা দুটোর মুখে তবু কিছু ভাল খাবার তুলে দিতে পারবে পরভিন। সরকারের নানা ভাতার জন্য আবেদন করেছে তবে, এখনও কিছু জোটেনি। নতুন পরভিনের কথায়, “আমরা রেশনের চালটুকু পাই বাকি কিছুই নয়। পাব কী করে? পার্টির লোকেরাই সব নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। বাকি যারা পায় তারা সব পার্টির লোকেরা মানুষ বেছে বেছে দেয়, যাদের সত্যিকারের দরকার তারা পায় না’।
কাজ করো না কেন প্রশ্ন করলে উত্তর আসে, কাজ নেই। কলকাতায় কাজ আছে কিন্তু দুই সন্তানকে ফেলে আসব কী করে। অগত্যা কষ্টের সংসারে সতীনের ঘরই করতে হয় ঘর হারানো এই পরভিনকে। ছেলেবেলা বলতে মনে আছে নানীর ভালবাসা। আর পাড়ার নাম। আর কিছুই মনে নেই তার। ফুটব্রিজের ফুটপাতে সুসজ্জিত মানুষ দেখতে দেখতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মলিন পোশাকের পরভিন। ভাগের নাম, ভাগের সংসার নিয়ে পরভিন দিন গোনে একদিন বাড়ি খুঁজে পাওয়ার আশায়। ভালবাসা পাওয়ার আশা। ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি তার আসল উমাকে বরণ করতেই ভুলে গেছ। এ উমা তাই বোধনের আগেই বিসর্জিতা।
শুভেন্দু দেবনাথ:পুজো তো বড়লোকেদের। আমাদের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। দেখছো না ছেলেমেয়েদের জামা কাপড়টাও কিনে দিতে পারিনি। রাস্তায় ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ মায়ের পুজোর দিনে ক্ষোভ উগরে দেন আরেক মা। উমা এসেছেন বাপের বাড়ি। সেই আনন্দে বাঙালি মেতে উঠেছে সারা বিশ্বে। কিন্তু বাস্তবের এই উমার কোনও বাপের বাড়িই নেই। শুধু বাপের বাড়ি কেন, কোনও বাড়িই নেই তাঁর। এমনকী নামটাও ধার করা। উমা আজ পরভিন বিবি।
সেই কোন ছেলেবেলায় কীভাবে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনে নেই। শুধু মনে আছে, বাবা মা নেই, নানীর কাছে মানুষ। দশ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। কীভাবে পৌঁছে যান দিল্লির একটি হোমে তাও মনে নেই। হোম থেকে হোমে বদল হতে হতে একদিন পৌঁছে যান বারাসতের একটি হোমে। সেখানেই পরিচয় হয় আরেক পরভিনের সঙ্গে। তাকেও একদিন লোকের বাড়ি থেকে কাজ করে ফেরার সময় অনাথ ভেবে তুলে নেয় হোমের লোকেরা।
বছর পনেরোর দুই কিশোরীর বন্ধুত্ব হয় হোমেই। নামহীন এক কিশোরীকে নিজের নাম ধার দেয় পরভিন। শর্ত দেয় হোম থেকে পালাতে সাহায্য করলে তাঁর একটি নিজের ঘর হবে। একদিন দুই বন্ধু পালিয়ে যায় হোম থেকে। এখান থেকেই এক নতুন অধ্যায় শুরু হয় ছেলেবেলায় ‘ঘর’ হারানো ‘উমা’র।
কথা মতো বন্ধুটি নিজের ঘরে আশ্রয় দেয় তাঁকে। পরভিনের দাদাকে বিয়ে করে সতীনের সংসার শুরু করেন তিনি। বদলে যায় জীবন। সুখের দিকে নয় আরও এক অন্ধকারের দিকে। স্বামী সতীন নিয়ে বাস হাওড়া ময়দানে। স্বামী গাছ কাটে। কিন্তু কোভিড এবং বর্ষায় সে কাজ বন্ধ। স্বামী ঘর থেকে বেরতে দেয় না। অগত্যা নতুন মা শাশুড়িই ভরসা। দুই সন্তানকে নিয়ে সে চলে এসেছে লেকটাউন ফুটব্রিজের নীচে শাশুড়ির ‘উড়ালপুলের’ সংসারে। কারণ পুজো আচ্চার দিনে বাচ্চা দুটোর মুখে তবু কিছু ভাল খাবার তুলে দিতে পারবে পরভিন। সরকারের নানা ভাতার জন্য আবেদন করেছে তবে, এখনও কিছু জোটেনি। নতুন পরভিনের কথায়, “আমরা রেশনের চালটুকু পাই বাকি কিছুই নয়। পাব কী করে? পার্টির লোকেরাই সব নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। বাকি যারা পায় তারা সব পার্টির লোকেরা মানুষ বেছে বেছে দেয়, যাদের সত্যিকারের দরকার তারা পায় না’।
কাজ করো না কেন প্রশ্ন করলে উত্তর আসে, কাজ নেই। কলকাতায় কাজ আছে কিন্তু দুই সন্তানকে ফেলে আসব কী করে। অগত্যা কষ্টের সংসারে সতীনের ঘরই করতে হয় ঘর হারানো এই পরভিনকে। ছেলেবেলা বলতে মনে আছে নানীর ভালবাসা। আর পাড়ার নাম। আর কিছুই মনে নেই তার। ফুটব্রিজের ফুটপাতে সুসজ্জিত মানুষ দেখতে দেখতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মলিন পোশাকের পরভিন। ভাগের নাম, ভাগের সংসার নিয়ে পরভিন দিন গোনে একদিন বাড়ি খুঁজে পাওয়ার আশায়। ভালবাসা পাওয়ার আশা। ঘরের মেয়ের ঘরে ফেরার আনন্দে মাতোয়ারা বাঙালি তার আসল উমাকে বরণ করতেই ভুলে গেছ। এ উমা তাই বোধনের আগেই বিসর্জিতা।