AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

আঁধারে পুজো: ‘বুর্জ খলিফার’ পাশে ঘুঘনির দোকান দিলে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা! পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়িমুখো মহম্মদ

durga puja 2021: স্থানীয় বিধায়কের কাছে দেখা করতে গেলে তাঁর সহকারী জানান 'দাদা পুজোর উদ্বোধনে ব্যস্ত আছেন। পুজোর পরে আসুন'। কিতাবের আশঙ্কা এই যে পুজোয় এত লোক মাস্ক না পরে বেরিয়েছেন, এর ফল ভোগ করতে হবে তাদের মতো নীচু তলার বাসিন্দাদের। করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে তারা হয়ত আর বাঁচবেন না।

আঁধারে পুজো: 'বুর্জ খলিফার' পাশে ঘুঘনির দোকান দিলে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা! পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়িমুখো মহম্মদ
| Updated on: Feb 02, 2022 | 7:07 PM
Share

শুভেন্দু দেবনাথ: চারদিকে মানুষের মাথা, ভিড়ে গিজগিজ করছে লেকটাউনের বিগবেন। সকলেরই মুখ শ্রীভূমির দিকে। ‘বুর্জ খলিফা’ হাতের নাগালে পেলে কেইবা ছেড়ে দেয়! তাই কাতারে কাতারে সুসজ্জিত মানুষ। কারও মনে হেলদোল নেই চারপাশে কী চলছে, সকলেই লাইনে দাঁড়িয়ে কখন দড়ি খুলে দিলে তারা এক ধাপ এগিয়ে যাবে বুর্জ খলিফার দিকে। এই লাইন থেকে সামান্য দূরে দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন এক মধ্য বয়সী মানুষ। তাঁর আশেপাশে পড়ে আছে গ্যাসের সিলিন্ডার, হাড়ি, কড়াই, ত্রিপল। তিনি মহম্মদ কিতাবুদ্দিন। লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা।

নামের মধ্যে ‘কিতাব’ থাকলে কী হবে। ছেলেবেলা থেকেই অভাবের তাড়নায় তার হাতে বই ওঠেনি। অগত্যা পেট চালাতে জোগাড়ের কাজ থেকে শুরু করে, রিক্সা চালানো, বিরিয়ানির কারিগর, যখন যে কাজ পেয়েছেন করেছেন। লকডাউনে সে কাজেও পড়েছে বাধা। এক এক সময় এমন অবস্থা যে এক এক দিন খাওয়াও জোটে না। ভেবেছিলেন পুজোয় রিক্সা চালালে কিছু রোজগার হবে। তাতেও বাধা পুলিশের। ক্ষোভের সঙ্গে কিতাব বলেন, ‘বাঁচার কোনও সুযোগ নেই। শুধু বুকের মধ্যে এখনও শ্বাসটুকু আছে বলে বেঁচে আছি।’

এখানেই শেষ নয়! ইচ্ছে ছিল পুজোয় মণ্ডপের সামনে ঘুগনির রোলের দোকান দিয়ে কিছু রোজগার করবেন। সেই মতো হাজার ত্রিশেক টাকা বিনিয়োগ করে কিনেছিলেন দোকানের জিনিসপত্রও। কিন্তু সেখানেও বাধ সাধল পুজোর উদ্যোক্তারা। দাবি, ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে দোকান দিতে গেলে। মাথায় হাত পড়েছে কিতাবউদ্দিনের। মালপত্তর গুছিয়ে ফিরে যেতে হবে ভাড়া বাড়িতে। তিন মেয়েকে কষ্ট করে স্কুলে পড়াচ্ছেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় এখন ভাবছেন মেয়েদের পড়াশুনা ছাড়িয়ে দেবেন। তাঁর কথায় পেটের ভাতই দিতে পারছি না তার আবার পড়াশুনা। কিতাবুদ্দিনের আক্ষেপ ইদেও পারেননি, এখন পুজোতেও তিন মেয়েকে জামাকাপড় কিনে দিতে পারেননি। ঠাকুর দেখার জন্য তো পয়সা লাগে। সে পয়সা তাঁর নেই।

সরকার তো এখন বিভিন্নরকম ভাতা দিচ্ছে সে সব নিয়ে প্রশ্ন করতেই উত্তর আসে সমস্ত আবেদনই করেছি কিন্তু আমরা পাইনি। স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলেন পাত্তা পাননি। পাত্তা পাননি স্থানীয় বিধায়কের কাছ থেকেও। দিন কয়েক আগেই অসু্স্থ হয়েছিলেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে লেকটাউনেরই একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসা হয়নি কোনও। বিলও এত আসে যে ঘরের জিনিসপত্র বন্ধক দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন স্ত্রী। শেষে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হন তিনি। তার কথায় প্রাইভেট নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে ভর্তি তো হয়েছিলেন কিন্তু ফেলে রেখেছিল তারা। শুধু তাই নয় ১৪ দিন আগে ডায়ারিয়া হয়ে মারা গিয়েছেন ভাই আকবর আলি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে তাকেও ওই একই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসার নামে তাকে শুধু ভেন্টিলেশনে ফেলে রাখা হয়। এমনকী দেখতেও দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় বিধায়কের কাছে দেখা করতে গেলে তাঁর সহকারী জানান ‘দাদা পুজোর উদ্বোধনে ব্যস্ত আছেন। পুজোর পরে আসুন’। কিতাবের আশঙ্কা এই যে পুজোয় এত লোক মাস্ক না পরে বেরিয়েছেন, এর ফল ভোগ করতে হবে তাদের মতো নীচু তলার বাসিন্দাদের। করোনার তৃতীয় ঢেউ এলে তারা হয়ত আর বাঁচবেন না। কথা বলতে বলতেই আলো ঝকমকে মণ্ডপের আলো পেছনে ফেলে ভ্যান চালিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে ভাড়া বাড়ির দিকে পা বাড়ান কিতাব। পেছনে তখন জনতার উল্লাস ব্যারিকেড খুলে দিয়েছে পুলিশ। তারা দেখতে পাবেন গর্বের বুর্জ খলিফা। কিতাবের গলার আওয়াজ ঢেকে যায় জনতার সেই উল্লসিত গর্জনে।

আরও পড়ুন: আঁধারে পুজো: ‘বুর্জ খলিফার’ নীচে ‘আধখানা’ বুক নিয়ে পরভিনের মলিন সংসার