
নয়াদিল্লি: শীতের শহরে শুরু শিল্প ও সাহিত্য চর্চা। সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে ব্যবসা। কলকাতার বুকে দু’দিন ধরে চলবে বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি লিটেরেচার ফেস্ট (Business & Economy Literature Fest)। নিউটাউনে তাজ তালকুটিরে আয়োজিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান। শনিবার সেখানেই প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এদিন নিজের হাতে ইআইআইএলএম কলকাতার কর্ণধার, চেয়ারম্যান অধ্যাপক রমাপ্রদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই ‘গীতা ফর ওয়ার্ক অ্য়ান্ড লাইফ’ উদ্বোধন করেছেন রাজ্যপাল। বার্তা দিয়েছেন গীতা নিয়ে। পাশাপাশি, গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক আলোচনার সঙ্গেই তুলে ধরেছেন নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতাও।
শনিবার অনুষ্ঠানের শুরুতেই মশকরার সুরে রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি ক্য়ামেরা দেখলেই একটু লজ্জা পাই। তবে একদিন একজন ক্যামেরাম্যান আমার ছবি তুলেছিলেন। সে আমায় বলেছিল, এই ছবিটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তোলা হয়েছে। আমি ছবিটা যখন লক্ষ্য করলাম, তখন দেখি অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানের মুখ মিশিয়ে দিলে যেমন দেখতে লাগবে, আমাকেও তেমনই দেখাচ্ছে।’
রাজ্যপালের বার্তায় ঠাঁই পেয়েছে নানা তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ। তাঁর মতে, ‘ব্যবসার উন্নতির স্বার্থে বিজ্ঞাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। কিন্তু এই বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞাপন দাতাকে ছিল জানেন? আমরা যে অ্যাডাম-ইভের গল্প পড়েছি, তাতে উল্লেখিত স্যাটান বা শয়তান। সেই প্রথম জ্ঞানবৃক্ষ থেকে ফল খেতে প্ররোচনা জুগিয়েছিল।’ এই ফাঁকেই গীতার কথা তুলে ধরেন তিনি। গীতার শ্লোকের অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেহ পোশাকের মতো, আমাদের আত্মাই অমর। আমি নিজের দেহ ছুঁতে পারলেও, আত্মাকে ছুঁতে পারব না। যাঁরা গীতা পড়বেন, তাঁরা এটা খুব ভাল ভাবে বুঝতে পারবেন।’
বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমি লিটারেচার ফেস্টের মঞ্চ থেকে কেরলে থাকাকালীন কর্মজীবনের কথা স্মরণ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন তিনি বলেন, ‘আমি যখন কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলাম, সেই সময় আমাকে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী এলাকাগুলির জন্য বিকাশের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই মর্মেই আমি বেশ কয়েকজন সরকারি আধিকারিককে ডেকেছিলাম। তাঁদের থেকে পরামর্শ নেব বলে। একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমায় সেতু বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। টাকা বরাদ্দ হল, সেতুও তৈরি হল।’
এরপরই বিতর্ক। উদ্বোধনের দিন কেন নেই কোনও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধান মুখ। রাজ্যপাল বলেন, ‘এই নিয়েই বিরাট হেডলাইন হয়েছিল। এরপর আমরা একজনকে ডেকে নিয়ে আসি। সেই সময়ের মতো একজন সাংবাদিক ওই আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের সেতুটা পছন্দ হয়েছে কিনা। উত্তরে ওই প্রধান বলেছিলেন, তাঁরা আগে নদী পেরিয়ে যেতেন, এবার সেতুর উপর দিয়ে যাবেন।’
জেলাশাসক থাকাকালীন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার জন্য় আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু কোনও রকম আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই তাতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শনিবারের ভাষণে সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরলেন রাজ্যপাল। বললেন, ‘আমাকে আচমকাই একটি বিষয় নিয়ে ভাষণ দেওয়ার জন্য় বলেছিলেন ওই সম্মেলনের উদ্যোক্তারা। আমি একটু চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মোটামুটি ভাবে সবটা মিটিয়েছিলাম।’ এই সম্মেলনের পরেই এক মহিলার সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাজ্যপালের। এদিন তিনি বলেন, ‘ওই মহিলা আমার কাছে এসে বলেন, তাঁর ঘুম হচ্ছে না। আমি যদি তাঁকে কোনও পরামর্শ দিতে পারি। কিন্তু আমি তাঁকে জানাই, আমার নামের পাশে লেখা ডক্টর শব্দটি পিএইচডি-র জন্য। আমি কোনও ডাক্তার নই। তিনি আমাকে বলেন, তিনি সেটা জানেন। আসলে উনি আমার ভাষণ শুনতে চাইছেন। কারণ, শেষবার আমার ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণের প্রথম ১ ঘণ্টার মধ্যেই উনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।’