
কলকাতা: বসে যাচ্ছে স্টেশন, ভেঙে ফেলা হবে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন! নির্মাণেই কি ত্রুটি? এই নিয়ে শুরু হয়েছে জলঘোলা। কলকাতা মেট্রোর কর্তাদের দাবি, কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের নির্মাণে নেই ত্রুটি। পাল্টা নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জমির চরিত্র না বুঝেই কাজ হয়েছে। মাটির দুর্বলতাই কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করছেন।
কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী সময়কালীন তৈরি হয়।স্টেশনটি তৈরি করার দায়িত্ব পেয়েছিল রাইটস্। ২০১০ সালে ৪ অক্টোবর মহালয়ার দিন কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
বিপর্যয়ের পর কলকাতা মেট্রো তরফে দাবি করা হচ্ছে, নির্বাণগত বিষয়ে কোনও ত্রুটি ছিল না। ব্যাখ্যা করে মেট্রো তরফ দাবি করা হয়েছে, এক একটি স্তম্ভের তলায় চারটে পাইল বসানো হয়েছে।
সেই চারটি পাইলের উপরে পাইলকাপ বসানো হয়। তার উপরে স্তম্ভ বসিয়ে মেট্রো স্টেশনটি তৈরি করা হয়েছে। এই পাইলগুলি মাটির তলায় প্রায় ২২ মিটার গভীর পর্যন্ত গাঁথনি করা রয়েছে।
নির্মাণগত কাজের সময় যে ধরনের বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, এখানে ১০০ শতাংশ নজরদারি ছিল বলেই মেট্রো তরফে দাবি। যদিও নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের কথায় জানিয়েছেন, ২২ মিটার গাঁথনি করার কথা মেট্রো রেলের তরফে দাবি করা হলেও একটা বিষয় পরিষ্কার মাটির চরিত্র বুঝে মেট্রো স্টেশন তৈরি করা হয়নি।
মাটির চরিত্র যে দুর্বল ছিল এবং মাটি এই বিরাট ভার যে বহন করতে অক্ষম, সেটা এখন পরিষ্কার হচ্ছে। কলকাতা মেট্রো সূত্রে খবর, সংস্কারের পর নতুন করে মেট্রো স্টেশন এবং সেখানে সমীক্ষার দায়িত্ব পুনরায় রাইটসকে দেওয়া হয়েছে।
কাজ করার ক্ষেত্রে যাতে কোন রকম ত্রুটি না থাকে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এই সমীক্ষক সংস্থাকে। ইতিমধ্যে রেলবোর্ডের তরফে কলকাতা মেট্রোর কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, কেন ১৫ বছরের মধ্যেই একটি নবনির্মিত মেট্রো স্টেশন এভাবে বিপর্যয় দেখা দিল, সেটা নিয়েও অসন্তুষ্ট রেলবোর্ডের কর্তারা।কলকাতা মেট্রো তরফে ইতিমধ্যেই একাধিক যুক্তি খাঁড়া করার চেষ্টা চলছে।
যদিও এ বিষয়ে নির্মাণ বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের বক্তব্য, “১৫ বছর নির্মাণের পর একটা আস্ত স্টেশন যখন বসে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে, কোথাও একটা ভুল হয়েছিল। মাটির ধারণ ক্ষমতা বোঝার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনও একটা ভুল হয়েছিল।”
যদিও নির্মাণগত এবং মাটির চরিত্রে যে যথেষ্ট ত্রুটি ছিল, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন মেট্রো ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশই। স্বাভাবিকভাবেই, বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে মাটির দুর্বলতা কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে এদিন কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের পিছনের দিকে গিয়ে দেখা গেল, নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে একাধিক অংশ। কংক্রিটের অংশগুলিতে ফাটল ধরেছে। ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই মেট্রো স্টেশনের শেড খোলার কাজ শুরু হয়েছে। খোলা হচ্ছে বাকি অংশগুলিও। তবে মেট্রো জেনারেল ম্যানেজারের কথায়, দুর্গাপুজোর আগে মেট্রোর কাজে হাত দেওয়া সম্ভব নয়।