কসবার সেই ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্পে টিকা নিয়েই খটকা লেগেছিল মিমির! পাকড়াও ‘আইএএস’
নিজেকে আইএএস নামে পরিচয় দিয়েছিলেন। আসতেন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে। তাঁর সঙ্গে থাকত নিরাপত্তারক্ষীরাও। কসবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভুয়ো ক্যাম্পের পরতে পরতে ধাঁধা। আর দেবাঞ্জনকে ঘিরে জটিল রহস্য।
কলকাতা: কলকাতা পুরসভার নাম ভাঙিয়ে ভুয়ো টিকাকরণ শিবির চলল কসবা থানা এলাকায়। জয়েন্ট কমিশনারের ভুয়ো পরিচয়পত্র সহ গ্রেফতার দেবাঞ্জন দেব নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে আইএএস বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। আসতেন নীলবাতি লাগানো গাড়িতে। তাঁর সঙ্গে থাকত নিরাপত্তারক্ষীরাও। তাঁর প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন খোদ সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও। টিকা নিয়েছেন সেই ক্যাম্প থেকেই। কসবার ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভুয়ো ক্যাম্পের পরতে পরতে ধাঁধা। আর দেবাঞ্জনকে ঘিরে জটিল রহস্য।
কসবার এই ভুয়ো ক্যাম্প থেকে টিকা নিয়েছেন খোদ অভিনেত্রী সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও (MP Mimi Chakraborty)। আর তার হাত ধরেই গোটা বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
কিন্তু কীভাবে এই গোটা বিষটি প্রকাশ্যে এল? জানালেন খোজ সাংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী
TV9 বাংলাকে মিমি চক্রবর্তী বললেন, “আমার কাছে কয়েকটি আগে একটি ফোন আসে। বলা হয় যে জয়েন্ট কমিশনার অফ কেএমসির উদ্যোগে একটি ক্যাম্প হচ্ছে। এখানে থার্ড জেন্ডার, বিশেষ সক্ষম ব্যক্তি, ছোটো ব্যবসায়ীদের টিকা দেওয়া হবে। তখন আমি বলি, অবশ্যই আসব। আমার আসাতে যদি ওঁরা অনুপ্রেরিত হন, আমি নিশ্চয়ই গোটা বিষয়টি প্রোমোট করব। আমি নিজেও ওখানে ভ্যাকসিন নিই। আর তারপরই আমার খটকা লাগে, যে আমার কোনও মেসেজ আসে না। আমি ভাবলাম চলে আসবে। সার্টিফিকেট চাই। তখন ওরা বলে, আমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে। আমি বাড়ি চলে যাওয়ার পরও সার্টিফিকেট আসে না। আমার অফিসের লোক গিয়ে ফের খোঁজ করেন। তখন ওরা বলে, তিন চার দিন সময় লাগবে। তখনই বুঝি এটা তো হওয়ার কথা নয়। সকলের কাছ থেকে খোঁজ নিই। ওঁদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল কিনা, মেসেজ এসেছে কিনা! কিন্তু প্রত্যেকেই না জানান। তারপরই বুঝতে পারি, বড় গণ্ডগোল হচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি।”
মঙ্গলবারও দেবাঞ্জনকে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত এই ক্যাম্প থেকে টিকা নেন ২৫০ জন। জানা যায়, অনুমতি ছাড়াই চলছিল এই ক্যাম্প। পাকড়াও করা হয়েছে দেবাঞ্জনকে। তাঁর থেকে উদ্ধার হয়েছে জাল আই কার্ড। এমনকি তাতে কলকাতা পুর কমিশনার বিনোদ কুমারের সই জাল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাঁর থেকে মেলে নীল বাতি যুক্ত গাড়িও। কোথা থেকে এল এত টিকা? কীভাবেই বা পুরসভার লোগো ব্যবহার করা হল? আদৌ কি আসল টিকা? এই ক্যাম্পের উদ্যোক্তা কারা? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা।
এ প্রসঙ্গে বরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলেন, “কোনও টিকাকরণ শিবির হলে. টিকা বরো থেকেই যায়। কোথায় ক্যাম্প হচ্ছে সেটা আমাদের জানানো হয়। আমি যখন জানতে পারলাম, এটা স্বাস্থ্য দফতরের আওতায় নয়, তখন আমি স্পেশ্যাল কমিশনারকে ফোন করলাম। দেবাঞ্জন দেব নামে এক ভদ্রলোক এই কাজ করছেন। টিকা কোথা থেকে আসল জানি না। পৌরসভা থেকে নেওয়া হয়নি। টিকা কোথা থেকে এল, সেটা পুলিশ তদন্ত করে বার করবে।”
আরও পড়ুন: পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই টিকাকরণ শিবির! গ্রেফতার ‘প্রতারক’ আইএএস
প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, কসবার এই ক্যাম্পে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। রোজ গড়ে ১০০ জন করে নিয়েছেন ভ্যাকসিন। প্রাপকদের কথায়, বিনামূল্যেই দেওয়া হচ্ছিল ভ্যাকসিন। বাজেয়াপ্ত হওয়া ভ্যাকসিন ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরের রেকর্ড এই ভ্যাকসিন নেওয়ার খবর নেই। ফলে এই ভ্যাকসিন জাল কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।