
কলকাতা: দীর্ঘদিনের প্রেম। সেই প্রেম পরিণতি পাওয়া আগেই হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লেন প্রেমিকা। ঘন ঘন জ্বর আসত শুরু করে তাঁর। এই চিকিৎসক, ওই চিকিৎসক, নানান পরীক্ষা- ধরা পড়ে মারণ রোগে আক্রান্ত বছর তেইশের ওই যুবতী। শুরু হয় চিকিৎসা। পাশে ছিলেন প্রেমিক। সর্বক্ষণ। একেবারে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। চিকিৎসকরা একদিন হার মানেন। লড়াই শেষ হয় প্রেমিকার। কিন্তু তখনও প্রেমিকাকে বউ সাজে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাই মৃত্যুশয্যাতেই প্রেমিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরালেন যুবক। এই যুগে যেখানে ঘন ঘন বিশ্বাসঘাতকতা, প্রেম ভাঙার কাহিনী ভূরি ভূরি শোনা যায়, সেই সমাজেই দৃষ্টান্ত গড়লেন কলকাতার এই যুবক।
বছর তিরিশের যুবক সাগর বারিক কলকাতার বাসিন্দা। বেশ কয়েক বছর আগে হাওড়ার বাসিন্দা মৌলি মণ্ডলের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। প্রেম জমতে থাকে। দুই বাড়ি সেই সম্পর্ক মেনেও নেয়। সম্পর্ককে পরিণতি দেবেন তাঁরা, নানান পরিকল্পনা। কিন্তু এর মধ্যেই মৌলির শরীরে বাসা বাঁধে জটিল রোগ! ২০২৩ সালে মলি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় ক্যানসারে আক্রান্ত মৌলি। চিকিৎসকের পরামর্শে শুরু হয় কেমোথেরাপি!
স্বাস্থ্যের বেশ খানিকটা উন্নতি হয়। আশার আলো দেখতে শুরু করে সাগর-মৌলি। কালীঘাটে পুজো দিয়ে দ্রুত বিয়ে করে নেওয়ার প্ল্যান ছিল তাঁদের। কিন্তু মৌলির শরীর খারাপ হতে থাকে। সাগরও ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৌলির দেখভালে, চিকিৎসক-হাসপাতাল, ছোটাছুটি, প্রেমিকাকে বাঁচানোর আপ্রাণ প্রয়াস, বিয়ে নিয়ে আলাদা করে আর ভাববার অবকাশই হয়নি তাঁর। এরপর হঠাৎ করে মৌলির শরীর এতটাও খারাপ হতে থাকে, তাঁকে ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। ২ মে হাসপাতালে মৃত্যু হয় মৌলির। সাগর তখনও তাঁর পাশে।
তখনও বেডে শুয়ে মৌলির নিথর দেহ। সাগর বাড়ি থেকে সিঁদুর নিয়ে আসেন। পরিয়ে দেন মৌলির সিঁথিতে। এরপর মৌলিকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বাপেরবাড়িতে। তারপর কনের বেশে মৌলির নিথর শরীর সাগর নিয়ে যান নিজের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকেই বধূর বেশে শেষযাত্রা মৌলির। সাগরও তখনও পাশে!
সাগর জানিয়ে দেন, তিনি বিবাহিত! বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁর, মৌলির সঙ্গে। আর কোনওদিনও বিয়ে করার প্রশ্নই আসছে না তাঁর। প্রেমিকার এটাই ছিল শেষ ইচ্ছা। দীর্ঘদিনের প্রেমকে এইভাবেই পরিণতি দিলেন তিনি।