দুপুর ২ থেকে ৪টে পর্যন্ত ফোন বন্ধ ছিল স্বামীর, ঠিক এখানেই মিসিং লিঙ্ক! পর্ণশ্রী খুনে শিউরে ওঠার মতো তথ্য
Parnasree Murder Case: পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী তপন মণ্ডলের বয়ানে মিলছে একাধিক অসঙ্গতি। সে সময় মিসিং লিঙ্কগুলিই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
কলকাতা: মৃতার বোন বলছেন, তিনি ভাবতেই পারছেন না। জামাইবাবুর সঙ্গে তাঁর দিদির সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল, কীভাবে এমনটা হতে পারে! এদিকে, সেই জামাইবাবুর ভূমিকাতেই সন্ধিহান তদন্তকারীরা। পর্ণশ্রীতে মা ও ছেলের রহস্যমৃত্যুতে স্বামীর যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। কারণ পেশায় ব্যাঙ্ক কর্মী তপন মণ্ডলের বয়ানে মিলছে একাধিক অসঙ্গতি। সে সময় মিসিং লিঙ্কগুলিই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের অনুমান, দুপুর ৩টে থেকে ৫টার মধ্যেই খুন হয়েছেন পর্ণশ্রীয় সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ছেলে তমোজিত। অন্তত প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই মনে করছে পুলিশ। এদিকে, দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত সুইচ অফ ছিল স্বামী তপন মন্ডলের ফোন।
মাঝের সময়ের ব্যবধানে মিসিং লিঙ্ক খুঁজছে পুলিশ। ওই সময় তপন কোথায় ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর অফিসে খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, যখন শিক্ষক পড়াতে এসেছিলেন, সেই সময় খুনী ভেতরেই ছিল। কারণ তখন ফ্যাট ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। এদিকে, স্বামী তপন বয়ানে জানিয়েছেন, তিনি সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। ঠিক এই খানেই ধোঁয়াশা রয়েছে।
এদিকে, পুলিশ যখন তমোজিতের দেহ উদ্ধার করেছে, তখন তার পরনে ছিল স্কুল ড্রেস। গলায় টাই বাঁধা ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, যে সময় ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন অনলাইনে ক্লাস করছিল তমোজিত। ঘটনার পর থেকে উধাও সেই মোবাইলও। পুলিশের তরফ থেকে তমজিত মন্ডলের স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের সময় তমোজিতের আচরণে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এখনও মোট ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তমোজিতের গৃহশিক্ষককেও। কারণ তিনিই বিকালে তাঁদের ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। অনেক ডাকাডাকিতেও না খোলায় তিনি চলে যান।
পুলিশের অনুমান রক্তের দাগ যেভাবে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, তাতে মনে হচ্ছে, খুনী সব কটি ঘরে ঘুরে বেড়িয়েছে। গোটা ঘটনায় তপন মণ্ডলকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তদন্তকারীরা। এদিকে তপনের দাবি, “আমি ঘরে ঢুকে দেখি, আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পাশের ঘরে আমার বউ। ছেলে বউ শেষ হয়ে গিয়েছে। কী বলব! ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। লাইট বন্ধ ছিল। ছেলে অনলাইন ক্লাস করছিল। আমার সঙ্গে কারোর কোনও শত্রুতা ছিল না। আমি কী বলব!”
এদিকে, মৃত সুস্মিতার বোন অর্পিতা বলেন, “জামাইবাবুর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল দিদির। কখনও এমনটা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। আমরা তো ওদের মধ্যে কোনও অশান্তির খবর জানতাম না। জামাইবাবুর সঙ্গে আশেপাশের কারোর কোনও শত্রুতা ছিল কিনা, তাও জানা নেই।”
তদন্তকারীরা যখন ঘরে ঢুকেছিলেন, তখন দেখেন ঘরের বেসিন ছিল রক্তে মাখা। মেঝেতে পড়ে ছিল বটি ও ছুরি। পুলিশ সেগুলিকে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও যে ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস চলছিল, সেটিও উধাও। সেই ফোনে কিছু তথ্য প্রমাণ থেকে যেতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
সুস্মিতাদের ঘরে ছিল না কোনও সিসি ক্যামেরা। তবে ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে ছিল, সেটিও খারাপ। তাই প্রমাণ সংগ্রহে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তদন্তকারীদের। সোমবারই পর্ণশ্রীর সেনপল্লি এলাকায় একটি বহুতলে বছর চল্লিশের সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁঁর ছেলে বছর বারোর তমোজিতের গলা নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তকারীরা বলছেন এই ঘটনার পরতে পরতে রয়েছে রহস্য।
পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। জানা গিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যেহেতু তপনবাবুর পরিবারের সদস্য মাত্র ৩-ই ছিল, তাই চেনাশোনা কোনও ব্যক্তি ছাড়া এই ঘটনা ঘটনো একপ্রকার অসম্ভব বলেই ধারণা পুলিশের। কে বা কারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ওই আবাসনের সিসিটিভি অচল বলে জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। আরও পড়ুন: স্বামীর পিছু নিয়েও ধরতে পারেননি, বন্ধ ঘরে নিজেরই বিধবা দিদির অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ মহিলা!