কলকাতা: পুজোর মুখেই আবারও শহরে ভেঙে প়ল পুরনো বাড়ির একাংশ। উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর (Jorasanko) পুরনো বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। তাতে মৃত্যু হয় ২ জনের। তাঁদের মধ্যে এক জন বাইক চালক রয়েছেন। অপর জন পথচারী। সে সময় তিনি ওই বাড়ির নীচ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যালকনির একাংশ ভেঙে পড়ে তাঁদের ওপর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাড়িটি দীর্ঘদিনের পুরনো। অনেক দিন ধরে সংস্কারও হয়নি। বাড়ির একাংশ জরাজীর্ণ অবস্থা। শনিবার তখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আচমকাই ওই বাড়ির ব্যালকনির একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ওই সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন বছর সাতচল্লিশের এক ব্যক্তি। এখনও পর্যন্ত তাঁর নাম জানা যায়নি। স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বছর কুড়ির এক যুবক। ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান তাঁরা।
প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে খবর যায় থানায়, দমকলে। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরাও। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিত্সকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ওই বাড়ির একাংশের ধ্বংসস্তূপের নীচেও বেশ কয়েকজন আটকে ছিলেন। তাঁদেরকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এই ধরনের ঘটনা আরও একবার শহরের বিপন্নতাকে স্পষ্ট করল। সপ্তাহ খানেক আগেই আহিরীটোলায় বাড়ি ভেঙে বিপর্যয় ঘটে। মৃত্যু হল তিন বছরের শিশু-সহ ২। মৃত্যু হয়েছে ৫২ বছরের এক প্রৌঢ়ারও।
স্থানীয়রা জানান, দোতলা ওই বাড়িটি দীর্ঘদিনের পুরনো ছিল। দীর্ঘদিন তাতে কোনও সংস্কারও হয়নি। তবে পুরনো ওই বাড়িতে কয়েকটি পরিবার থাকে। ১০ নম্বর আহিরীটোলার ওই বাড়িটিকে আগেই বিপজ্জনক বাড়ি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সাইন বোর্ড। কিন্তু পুরসভার টাঙানো সেই বোর্ড খুলে ফেলেন বাড়ির বাসিন্দারা। বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদের জেরে বাড়ির সংস্কারও করা হয়নি।
পুরসভার রেকর্ডে শহরে বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। কিন্তু বিপজ্জনক অংশ না ভাঙার ফলে যে ঝুঁকির আশঙ্কা, তাতে পুরসভার ভুমিকা কী? প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলে। সরকারি হিসেবে ৩ হাজার বলা হলেও বেসরকারি হিসেব অন্যই বলছেন বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরা। তাঁদের কথায়, শহরে এমন ক’টা বাড়ি রয়েছে, তার তথ্যও নেই পুরসভার কাছে। কেউ অভিযোগ করলে তখন পুরসভা জানতে পারে যে সংশ্লিষ্ট নির্মাণটি বেআইনি। বরোভিত্তিক দল থাকলেও পুরকর্মীর অভাবে অনেক সময়েই বেআইনি নির্মাণের উপর নজরদারির কাজটা ঠিক ভাবে করা যায় না বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
কিন্তু বেআইনি নির্মাণের ‘রোগ’ এত পুরনো হওয়া সত্ত্বেও কেন সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই পুরসভার কাছে? এই প্রশ্ন উঠেছে পুর প্রশাসনের একাংশের মধ্যে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলা মুশকিল। ক’টা ভাঙার অর্ডার রয়েছে, সেটা বলা সম্ভব। তবে বেশির ভাগ বেআইনি নির্মাণই পুরসভা ভেঙে দেয়। কয়েকটি জায়গায় হয়তো অসুবিধায় পড়তে হয়।’’
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: সনাতন ধর্মের সব পালটে যাচ্ছে, পিতৃপক্ষেও পুজো উদ্ধোধন!