
প্রবল বৃষ্টি আর নিম্নচাপের দাপট, কার্যত অচল শহর কলকাতা। বলা যায় একেবারে ‘মেঘ ভাঙা বৃষ্টি’ হয়েছে কল্লোলিনী তিলোত্তমায়। কোথাও জমেছে হাঁটু জল আবার কোথাও জল জমেছে বুক পর্যন্ত। আর এতে ধাক্কা লেগেছে শহরের দৈনন্দিন জীবনযাপনে। থমকে গিয়েছে বাস, ট্রেন। মাঝ রাস্তায় খারাপ হয়েছে একাধিক বাইক বা ব্যক্তিগত গাড়ি।
২৩ তারিখ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে প্রবল বৃষ্টির কারণে জল জমে গিয়েছে কলকাতার বেশিরভাগ জায়গায়। কলকাতায় কোথাও কোথাও ২ থেকে ৩ ঘন্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি। একই সঙ্গে ফুঁসছে গঙ্গাও। লক গেট খুললে জল ঢুকছে কলকাতাতেই, বলছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফলে, সকাল ৯টা পর্যন্ত যা জল জমেছে কলকাতায় তা সম্পূর্ণ বের করতে ৭-৮ ঘন্টার বেশি লেগে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুজোর আগে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় মার খেয়েছে বিকিকিনিও। সাধারণ বাজার, দোকান খোলেনি বেশিরভাগ এলাকাতেই। অনেক ব্যবসায়ী টাটকা সবজি ট্রেনে করে কলকাতায় নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। ট্রেন থমকে যাওয়ায় সেই ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন। জলের কারণে থমকে গিয়েছে ই-কমার্স থেকে ক্যুইক কমার্স। ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজনে এই মুহূর্তে চলছে বিরাট সেল। আর সেই কারণেই পুজোর আগে ডেলিভারি পার্সনদের প্রায় দম ফেলার সময় নেই। একাধিক জায়গা জলমগ্ন হওয়ায় সেই সব জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে পার্সেল পৌঁছে দিতে সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা।
এ দিকে, ক্যুইক কমার্সে সঙ্গ যুক্ত ডেলিভারি পার্সনরাও আজ বেশ চাপে। কারণ, একাধিক ফুড ডেলিভারি অ্যাপ বা ক্যুইক কমার্স অ্যাপের মাধ্যমে খাবার, ওষুধ বা কোনও প্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার দিলে তা পৌঁছতে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়ছেন ডেলিভারি পার্সনরা। কারণ, একাধিক রাস্তায় জল জমায় সেই রাস্তায় বাইক নিয়ে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, জল ঢুকে বাইকের ইঞ্জিন সিজ হয়ে গেলে আরও বড় সমস্যায় পড়বেন তাঁরা।
অফিস পাড়াতেও একই ছবি ধরা পড়েছে। হাওয়া অফিসের খবর পাওয়া মাত্রই অনেক সংস্থা তাদের কর্মীদের সাবধান করে দিয়েছে। অনেক সংস্থা মেল করে জানিয়েছে বাড়ি থেকে কাজে বসতে। তথ্য প্রযুক্তি কর্মী গীতিমালিকা বলছেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে মেল দেখে জানতে পারলাম যে আজ বাড়ি থেকে কাজ করার কথা জানিয়েছে আমার কোম্পানি”। জল জমেছে কলেজ স্ট্রিট এলাকাতেও। একাধিক জায়গায় বুক সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে, স্থানীয় বই ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
নেতাজি নগর এলাকার ব্যবসায়ী দিবাকর আচার্য বলেন এই বৃষ্টির কারণে প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে তাঁর। একই সঙ্গে এক মর্মান্তিক ঘটনার কথাও বললেন তিনি। তাঁরই দোকানের পাশে এক ফল ব্যবসায়ীর দোকান। তিনি রোজ এক পথ কুকরকে খাবার দিতেন। আজ বিদ্যুতের খুঁটিতে অসাবধানতা বশত হাত দিয়ে ফেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ওই ব্যবসায়ী। আর তিনি যে কুকুরটিকে রোজ খাবার দিতেন, সেই কুকুরটি বৃষ্টির মধ্যেই বাঁচাতে আসে ওই ফল ব্যবসায়ীকে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ওই অবলা প্রাণীটিও।
শিয়ালদহের পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী প্রশান্ত দাস বলছেন, “রাত ৩টের সময় মাছের আড়তে গিয়েছিলাম। তখনই এত জল শিয়ালদহ স্টেশন পেরিয়ে আর এগোতে পারিনি। কারণ তখনই ওখানে বুক সমান জল। মাছের গাড়ি থেকেও মাছ নামানো যায়নি।” আর ক্ষতির অঙ্ক, প্রশান্ত বাবুর কথায়। “লক্ষাধিক টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে”। ফলে, পুজোর আগে এই ধাক্কা কীভাবে সামলায় শহর কলকাতা, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।