কলকাতা: একটা সরু রাস্তা, তাতে গা-লাগোয়া জরাজীর্ণ বাড়ির সারি। দীর্ঘদিনের অযত্নের ছাপ স্পষ্ট তাতে। নেই অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থাও। ঘিঞ্জি এলাকা। কলুটোলা স্ট্রিটের চার তলা ভবনের আগুন আরও একবার জতুগৃহ শহরকে বেআব্রু করল। এই খবরটি যখন সম্প্রচারিত হচ্ছে, তখনও পর্যন্ত দমকলের ২০ টি ইঞ্জিন নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আগুন নেভানোর। নিজেদের শেষ চেষ্টা দিয়ে অস্বিত্ব বাঁচানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। ৭ ঘণ্টায় চেষ্টাতেও তখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। একে ঘিঞ্জি এলাকা, তারপর জলের অভাব। পরিস্থিতি বুঝে শেষমেশ এগিয়ে এলেন ইমামরাও। ১১ নম্বর কলুটোলা স্ট্রিটের ওই ভবনের উল্টো দিকেই কলুটোলা মসজিদ। ইমামরা মসজিদের দরজা খুলে দেন। মসজিদের ওপরে উঠে ভিতর থেকে জল নিয়ে চলে আগুন নেভানোর কাজ।
দমকল কর্মীদের নিরন্তর প্রয়াস চোখ এড়ায়নি ইমামদের। কুণ্ডলীকৃত কালো ধোঁয়া ততক্ষণে গ্রাস করেছে গোটা এলাকা। জ্বলন্ত ভবনের ওপর থেকে টপ টপ করে নীচে পড়ছে দাহ্য বস্তু। তাতে আরও এক বিপদের আশঙ্কা। আর আরও ভয় ধরিয়েছে ওই ভবনের বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার। আগুন নেভাতে যে প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন… কিন্তু এই সরু রাস্তায় ‘জলের সোর্স’ কম।
দমকলকর্মীদের সমস্যা বুঝতে দেরি হয়নি ইমামদের। কিছু না ভেবেই মসজিদের দরজা খুলে দেন ইমামরা। মসজিদের ভিতর ঢুকে যান দমকলকর্মীরা। হাতে মোটা জলের পাইপ। মসজিদের জানলার ভিতর থেকে পাইপ বার করে উল্টোদিকের বাড়ির আগুন নেভাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। TV9 বাংলার হাতে এল সেই ছবি।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, চার তলা ওই ভবনের সামনের অংশে পুরো আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পাশের বাড়িগুলিতেও। বিস্ফোরণের জেরে ভেঙে পড়ছে পাশের বাড়ির জানলার কাচ।
জানা যাচ্ছে, আগুন ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আগুনের উত্সস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। তবে ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে দমকলকর্মীদের। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দমকলের তত্পরতা নিয়ে ক্ষোভ ধরা পড়ছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল, যতটা তত্পরতার সঙ্গে কাজ করা উচিত, সেভাবে কাজ করছিলেন না দমকলকর্মীরা। কিন্তু পরে তাঁরা পরিস্থিতি বুঝতে পারেন। এদিকে, তত্পরতার সঙ্গে কাজ করছেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও।
শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবরে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। দমকল চার দিক থেকে জল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভবনের পিছনের দিকটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ওই এলাকা দিয়ে জল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না দমকলকর্মীদের। পরিস্থিতি বুঝেই মসজিদের দরজা খুলে দেন কর্তৃপক্ষ। তবে বহুতলের সব বাসিন্দাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ভবনের ভিতরে যে কটা সিলিন্ডার রয়েছে, তা বার করে আনার চেষ্টা চলছে।