
কলকাতা: জাতীয় সঙ্গীত শুনেও কেন স্লোগান থামাননি? এই অভিযোগ তুলেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় পাল্টা তৃণমূল বিধায়কদেরই ভর্ৎসনা করলেন হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। স্লোগান চলছে শোনার পরও জাতীয় সঙ্গীত কেন গাওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। আর এই নিয়ে এফআইআর করার বিষয়টিকে ‘ছেলেমানুষি আচরণ’ বলেই উল্লেখ করেছেন তিনি। বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে যে নোটিস দেওয়া হয়েছে, তার উপর অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না বলেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এফআইআর নিয়ে ভর্ৎসনা করে এদিন বিচারপতি বলেন, “সাধারণ মানুষ কী ভাবছে? কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মামলা করেছেন। কত ধর্ষণ মামলা, ক্রিমিনাল মামলার শুনানি হচ্ছে না, এই ধরনের একটা ছেলেমানুষি মামলার জন্য।” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন করেন, স্লোগান হচ্ছিল দেখেও কি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার দরকার ছিল? সবাই বসার পর শুরু করা যেত না?
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ নভেম্বর। ওই দিন স্লোগান দিতে দিতে বিধানসভায় প্রবেশ করেন বিজেপি বিধায়করা। এরপর তৃণমূল বিধায়করা জাতীয় সঙ্গীত শুরু করলেও বিজেপির স্লোগান শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। সেই এফআইআর থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, জাতীয় সঙ্গীত শুরুর আগে কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের তরফে এদিন দাবি করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী নিজে গানের কথা ঘোষণা করেন। তারপর গান শুরু হয়। বিচারপতি বলেন, “একটা জাতীয় সঙ্গীত গান, যেটার ঘোষণা হয়েছে কি না স্পষ্ট নয়, সেই মামলার জন্য সময় দিতে হচ্ছে আদালতকে।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ধরনা কোনও অনুষ্ঠান নয়, মন্ত্রীরা থাকলেই কি জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে? মন্ত্রী যদি পাঁচতারা হোটেলের উদ্বোধনে যান, সেখানেও কি জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হবে? স্লোগান হচ্ছিল দেখেও কি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার দরকার ছিল? সবাই বসার পর শুরু করা যেত না?
তৃণমূল বিধায়কদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “যেখানে সেখানে গাইতে পারেন না। গান গাওয়ার পরিবেশ যদি সঠিক না হয়। স্লোগান আর চেঁচামেচির মধ্যে গান হলে, কীভাবে আশা করেন বাকিরা যারা শুনছে? খোলা আকাশে কতদূরের মধ্যে গান শোনা সম্ভব?” বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে কিশোর দত্ত বলেন, “৩৫ থেকে ৪০ মিটার”। এরপর ঘটনার দিনের ভিডিয়ো দেখতে চান বিচারপতি। বলেন, “কতটা দূরত্ব ছিল দেখা দরকার।” পরবর্তী শুনানিতে কেস ডায়েরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।