‘ভাগীদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে নয়!’ ব্রিগেডে আব্বাস আসতেই ভাষণ ‘থামালেন’ অধীর

ব্রিগেডের (Left Congress Brigade 2021) মঞ্চে আবারও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) মুখ আব্বাস উদ্দিন (Abbas Siddiqui) সিদ্দিকিকে সেই পুরনো মেজাজেই দেখা গেল। বিঁধলেন অধীরকে (Adhir Chowdhury)।

'ভাগীদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে নয়!' ব্রিগেডে আব্বাস আসতেই ভাষণ 'থামালেন' অধীর
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 01, 2021 | 9:33 AM

কলকাতা: সেই পুরনো বেপরোয়া ভাব। হাত উঁচিয়ে, গলা ফাটিয়ে স্লোগান চড়ানো, চোয়াল শক্ত করে প্রতিপক্ষকে বিদ্ধ করা। ব্রিগেডের (Left Congress Brigade 2021) মঞ্চে আবারও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (ISF) মুখ আব্বাস উদ্দিন (Abbas Siddiqui) সিদ্দিকিকে সেই পুরনো মেজাজেই দেখা গেল। মঞ্চে উপস্থিত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Chowdhury) সামনে দাঁড়িয়েই বলে গেলেন. “আমি এখানে ভাগীদারি করতে এসেছি। তোষণ করতে আসিনি।”

বেলা ২.১৫ মিনিট। মঞ্চে তখন বক্তব্য রাখছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আচমকাই স্লোগান উঠল, ‘আব্বাস, আব্বাস… ভাইজান…’ উত্তেজনায় তখন ফুটছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকরা। ‘ভাইজান’কে একবার স্পর্শ করতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ওঁরা। গোটা পরিস্থিতিতে বক্তব্য থামিয়ে দিতে বাধ্য হন অধীর চৌধুরী। ভিড় সামলে দু’পাশে নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন আব্বাস। গোটা দৃশ্য তখন ভীষণভাবে রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ। স্টেজে বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর, আর আব্বাসকে আলিঙ্গন করে মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছেন মহম্মদ সেলিম। এগিয়ে এসে হাত মেলাতে, আলিঙ্গন করতে দেখা যায় সূর্যকান্ত মিশ্রকেও। তখনও বক্তব্য থামিয়ে দাঁড়িয়ে অধীর। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এগিয়ে এসে অধীরকে বলেন, ‘আপনি এ বার বক্তব্য শুরু করতে পারেন।’ বলা শুরুও করেছিলেন অধীর, তবে তা দীর্ঘায়িত করেননি। তারপরই বলতে ওঠেন আব্বাস।

আব্বাস শুরু থেকেই ছিলেন স্বমহিমায়। মহম্মদ সেলিম, ‘বিমান দা’ বামফ্রন্টের শরিক দলের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে নিজের শ্রদ্ধা জানান তিনি। লক্ষ্যণীয়ভাবে তখনও তাঁর মুখে শোনা যায়নি কংগ্রেসের নাম। গলা ফাটিয়ে আব্বাস বললেন, ‘আগামী নির্বাচনে রক্ত দিয়ে আমরা মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। আমরা বামপন্থীর প্রত্যেকটা, যেখানে যেখানে শরিক দল প্রার্থী দেবে, সেখানে সেখানে পুরনো সব ইতিহাস ভুলে গিয়ে বিজেপি ও মমতাকে উৎখাত করে ছাড়ব।’ একের পর এক বাণ ছুড়েছেন আব্বাস। আবহ গরম করেছেন।

আব্বাস বলেন, “এই ব্রিগেডের ময়দানে সভা করা আমার বড় স্বপ্ন ছিল। জোট যদি আরও এক সপ্তাহ আগে হত, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ডবল লোক ব্রিগেডে আনতাম।” প্যারেড গ্রাউন্ডে তখন আব্বাস অনুগামীদের গগণভেদী করতালি। কথা বলতে বলতেই চলে আসেন সেই প্রসঙ্গে। আব্বাস বলেন, “হয়তো আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আমি বাম শরিকদেরই কথা বললাম। কংগ্রেসের নাম করলাম না। তাহলে আমি স্পষ্ট বলে রাখি, ভাগীদারি করতে এসেছি, কারোর তোষণ করতে আসেনি। অনেক হয়েছে আর নয়। পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকার বুঝে নিতে এসেছি।” কংগ্রেসকে তাঁর বার্তা, ‘বন্ধুত্ব করতে চাইলে দরজা খোলা…’ উল্লেখ্য়, ঠিক পিছনেই মঞ্চে বসে রয়েছেন অধীর চৌধুরী, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আব্বাস একেবারে মঞ্চ থেকেই কংগ্রেসের ওপর চাপ তৈরি করলেন। উল্লেখ্য, আসন রফার ক্ষেত্রে আব্বাসকে ৫-৬টি আসনে বেশি ছাড়তে রাজি ছিলেন না অধীর। কিন্তু শেষমেশ বামেদের থেকে পছন্দের ৩০ টি আসন পেয়েছেন আব্বাস। নন্দীগ্রামও দাবি করেছেন তিনি। আসন নিয়ে যে অধীরকেই পাল্টা চাপে রাখলেন আব্বাস। বিশ্লেষকরা বললেন, আব্বাস দেখিয়ে দিলেন তাঁর রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য।

আরও পড়ুন:  ‘আমারই নাম কিন্তু টুম্পা’, প্যারোডির আক্ষরিক অর্থ বোঝাতে কার হাত ধরে ব্রিগেডে শ্রীলেখা?

এদিন আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। আব্বাসের বক্তব্য শেষের পরই তাঁর অনুগামী তথা ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কর্মী সমর্থকদের প্যারেড গ্রাউন্ড ছাড়তে দেখা যায়।