রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বলেই এসএসকেএম-কে চিহ্নিত করা হয়। সম্প্রতি সেই হাসপাতালের চেহারাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। জরাজীর্ণ দেওয়ালের ওপর পড়েছে নীল-সাদার প্রলেপ। হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসার সব বন্দোবস্ত রয়েছে বলেই দাবি রাজ্য সরকারের। তবে বেড না থাকা কিংবা আউটডোরের লম্বা লাইন নিয়ে রোগীদের ছোটখাটো ঝামেলা লেগে থাকে এখনও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অন্য জায়গায়। কোনও মামলায় তদন্তের নির্দেশ এলেই কেন সোজা এসএসকেএমে পৌঁছে যান তাঁরা? জেল হেফাজতে থাকাকালীন এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজিরও রয়েছে। মদন থেকে পার্থ, নেতাদের কল্যাণে কি নষ্ট হচ্ছে এসএসকেএমের মর্যাদা?
তৃণমূল এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার শুরুর দিকেই সামনে এসেছিল সারদা কেলেঙ্কারি। কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছিল মদন মিত্রকে। জেলেও গিয়েছিলেন তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই অসুস্থ হতে শুরু করেন তিনি।
বারবার নাকি তাঁর প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছিল। তাঁর মনের ওপর চাপ দিতে নিষেধ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই সময় দলেরই একাংশ দাবি করেছিল, মদন মিত্র আশ্রয় নেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন এসএসকেএমকে। অসুস্থতাটা আসলে ছুতো। ২০১৪-তে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। জেলে থাকাকালীন দীর্ঘ সময়ই তাঁর কেটেছিল এসএসকেএমে।
খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে দুটি শয্যা নিয়ে থাকতেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। গ্রেফতার হওয়ার দিন সাতেকের মধ্যেই তাঁর বুকে ব্যাথা শুরু হয়। এরপরই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় উডবার্ন ওয়ার্ডে। হাসপাতালে বসে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও সারতেন অভিযুক্ত নেতা। চকচকে কেবিনে পায়চারি করে, গান শুনেই সময় কাটাতেন তিনি।
একুশের নির্বাচনের ঠিক পরেই নারদ মামলায় একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। ফিরহাদ হাকিম প্রেসিডেন্সি জেল থাকলেও, বাকি তিন নেতাই চলে যান এসএসকেএমে।
অক্সিজেন লেভেল কমে যায় মদনের। অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয় তাঁকে। সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়ের হৃদযন্ত্রের অবস্থা ভাল ছিল না। তিন নেতার চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। উডবার্নে যখন তিন নেতার চিকিৎসা চলছে, তখন কেবিনে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল শোভনের বান্ধবী বৈশাখীকেও। এমনকি একই ঘরে বসে তিন নেতার আলাপ-আলোচনা করার ছবিও ধরা পড়েছিল ক্যামেরায়।
সিবিআই তলব করার পরই কলকাতায় এসেছিলেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি নিজাম প্য়ালেসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমনই খবর ছিল। সেই মতো তাঁর গাড়ি রাস্তায়ও বেরোয় যথা সময়ে। সংবাদমাধ্যমের ক্য়ামেরা যখন তাঁর গাড়ির পিছনে ধাওয়া করছে, তখন আচমকাই ঘুরে যায় সেই গাড়ির অভিমুখ। বোঝা যায় নিজাম নয়, গন্তব্য সেই উডবার্ন। তারপর বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলে তাঁর।
প্রায় ২৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সকালে নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় পার্থকে। সোশ্যাল মিডিয়া ততক্ষণে ভরে গিয়েছে উডবার্ন ওয়ার্ড সংক্রান্ত মিমে। পার্থও কি তবে…?
সেই সন্দেহ দূর হল শনিবার সকালেই। তাঁর গাড়ি সোজা চলে যায় এসএসকেএম নয়, ইএসআই হাসপাতালে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। দুপুরে আদালত ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। তারপরই সেই এসএসকেএম। সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে।
বারবার হেফাজতে থাকাকালীন বা হাজিরা দেওয়ার সময়েই কেন নেতা-মন্ত্রীরা এসএসকেএমে ছুটছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, এসএসকেএম এক নম্বর হাসপাতাল। এই হাসপাতাল ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কোনও মানে নেই।