
প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা ঘিরে তুলকালামকাণ্ড। বিজেপি বিধায়কদের তুমুল হট্টগোল, বিজেপির মুখ সচেতক শঙ্কর ঘোষকে সাসপেন্ড, বিজেপি বিধায়কদের কাগজ ছোড়া, ধস্তাধস্তি, বেনজির পরিস্থিতি তৈরি বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। এরা জেনেশুনেই, আমার কথা যাতে মানুষ শুনতে না পারে, আমার কন্ঠরোধ করার জন্যই ওদের এই কর্মসূচি। সকালে কিন্তু ওরা ছিল না। ওরা এসেছে, আমি আসার কিছুক্ষণ আগে। যখন নাম ডেকেছে, ওরা কিন্তু তখন বক্তব্য রাখেনি। যেই নিজেদের বলা হয়ে গিয়েছে, ওমনি অশান্তি। আমি বলবই, আমার কন্ঠরোধ করা যাবে না।”
বৃহস্পতিবার অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের হেনস্থার প্রতিবাদে বক্তৃতা রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বলার কথা ছিল। অগ্নিমিত্রা পালের নাম যখন ডাকা হয়েছিল, তিনি তখন অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। তখন মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তৃতা রাখতে বলেন স্পিকার। কিন্তু এরই মধ্যে চলে আসেন অগ্নিমিত্রা। বিজেপি বিধায়করা চিৎকার করতে থাকেন, যাতে অগ্নিমিত্রাকে বলতে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীও তখন স্পিকারকে অনুরোধ করেন, যাতে অগ্নিমিত্রাকে বলতে দেন তিনি। স্পিকার সে অনুমতি দেন, কিন্তু অগ্নিমিত্রার বক্তৃতার সময় কমিয়ে দেন। নির্দিষ্ট সময় পর তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে ওঠেন। বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সবে বক্তব্য রাখা শুরু করেছিলেন, তখনই ই শঙ্কর ঘোষ স্লোগান শুরু করেন। তারপর তাঁকেও একাধিকবার সতর্কের পর সাসপেন্ড করেন স্পিকার। বিধানসভায় তুমুল ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শঙ্কর নিজের আসনে অনড় ছিলেন। মার্শাল-সহ বিধানসভার নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে বার করার চেষ্টা করেন। তা নিয়ে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
তুমুল উত্তেজনার মধ্যেই ফের বলতে ওঠেন মমতা। বিজেপির উদ্দেশে বলেন, ”
স্বাধীনতার পর একটা দল, যাদের স্বাধীন করার জন্য কোনও ভূমিকা ছিল না, তারা এখন দেশের সবথেকে বড় ডাকাত। মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে মিশে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সাম্প্রদায়িক বিভাজন করেছিল। আগামী দিন বিজেপির কেউ নির্বাচিত হবেন না। স্বৈরাচারী শক্তি।”
মমতার সংযোজন, “সব জায়গায় বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার করছে। যে বাঙালি স্বাধীনতা এনেছে। মানুষ আপনাদের ভোট দেবে না। টাকা দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোট করিয়ে নির্বাচন জেতে। আজ ভয় পেয়েছে।”
বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ তকমা দেন মুখ্যমন্ত্রী। স্লোগান তোলেন, ‘বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।’ পাশাপাশি এদিন বিজেপি-তে যাওয়া দলবদলু বিধায়কদের উদ্দেশে আঙুল উঁচিয়ে বিঁধতে থাকেন তিনি। উল্লেখ্য, এদিন তুমুল অশান্তির কারণে, শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল ও মিহির গোস্বামীকে সাসপেন্ড করেন স্পিকার।