কলকাতা: ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ কবে হওয়া উচিত, ‘রাজ্য সঙ্গীতের’ ভাষা বদলের প্রস্তাব নিয়ে চাপানউতোর চলছেই। তার মধ্যেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রীতিমতো রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চ্যালেঞ্জ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, প্রস্তাবে রাজ্যপাল সই না করলে রাজ্যের কিছু যায় আসে না।
বিধানসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গ দিবস প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বিরোধী দলনেতা বলেছেন, পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে রাজ্যপালকে সই করতে দেবেন না। আমি বলে রাখি, রাজ্যপাল সই না করলে, আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা এটাকে পালন করব।” বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়েই স্পিকারের সামনে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সুরে মমতা বলেন, “আমি দেখব কার শক্তি বেশি? জনগণের শক্তি বেশি, নাকি রাজ্যপাল, মনোনীত লোকের শক্তি বেশি?” সঙ্গে এটাও সংযোজিত করেন, “আমি এটা বলতে চাইতাম না, যদি না রাজ্যপালের নাম না উঠত।”
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ দিবস কবে হওয়া উচিত, তা নিয়ে মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠক ডাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে বাংলার জন্য কোনও ‘রাজ্য সঙ্গীত’ করা যায় কিনা, সেই বিষয়টিও উত্থাপিত হয়। সেদিনের বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটিকে বাংলার রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বৈঠকে অবশ্য বিশিষ্ট জনেদের অনেকে আরও অনেক প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বিজেপি আবার চায় ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস হোক। বিধানসভায় এদিন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ লেখা পোশাক পরে এসেছিলেন। শুভেন্দু এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, ” ২০ জুন সব রাজভবনে, সব রাজ্যে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে লিখব যাতে জাতীয় স্তরে বাঙালি হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য এই ২০ জুনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে ভারত সরকার পালন করে।” শুভেন্দু এও বলেন, “রাজভবনে যাচ্ছি দল বেঁধে। যাতে এই রেজলিউশনটায় রাজ্যপাল অনুমোদন না দেন।”
এরপর বক্তব্য রাখতে উঠে রীতিমতো শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতার শুরুতেই মমতা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ দিবস, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’কে বাংলার সঙ্গীত হিসাবে গণ্য করার জন্য প্রস্তাব এনেছি। আমি যখন নবান্নে বিভিন্ন সাহিত্যিক, শিল্পী, সংবাদমাধ্যম, শিল্পজগতকে নিয়ে সভা করেছিলাম, তখন তাঁরা তাঁদের মত দিয়েছেন। অনেকে বলেছিলেন এত তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন কী?” মমতা আরও বলেন, “এতদিন ২০ জুন দিবসটাও পালন করা হয়নি। কেউ করেনি, কেউ জানতও না। ২০ জুন কখনও বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস পালন হয়নি। এই বছরই গর্ভনেন্ট অব ইন্ডিয়া নোটিফিকেশন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা রাজভবনেও রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছিলাম, এটা করবেন না, কারণ বাংলার মানুষ তা গ্রহণ করবে না। সব কিছু চাপিয়ে দিলে সহ্য করব না। ” তখনই শুভেন্দুর উদ্দেশে চ্যালেঞ্জের সুরে মমতা বলেন, “রাজ্যপাল সই না করলে, আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা এটাকে পালন করব।” বিশ্লেষকরাই বলছেন, শুভেন্দুকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী আদতে রাজ্যপালকেও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন।