জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে ‘মৃত’ ব্যক্তিকে জোড়াবাগান থেকে আটক করল সিবিআই
জীবিত মানুষকেই কাগজপত্রের মাধ্যমে 'মৃত' ঘোষণা করে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়া হয়।
কলকাতা: জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ ব্যক্তি আচমকাই জীবিত হয়ে উঠলেন। শুধুই বেঁচে ওঠেননি। একই সঙ্গে সরকারি ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরিও ভোগ করছিলেন এতদিনে। কিন্তু জালিয়াতি বেশিদিন চালানো গেল না। শনিবার কলকাতার জোড়াবাগান এলাকা থেকে ভুয়ো নথি, ডিএনএ রিপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেট জমা দেওয়া ওই ব্যক্তিকে আটক করল সিবিআই। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অমৃতাভ চৌধুরী। আটক করা হয়েছে অভিযুক্তের বাবাকেও।
২০১০ সালের ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রায় ১৫০ জনের। মৃতদের পরিবারে জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরির ঘোষণা করে রেল। তবে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়, ক্ষতিপূরণের জন্য মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর শংসাপত্র জমা করতে হবে। একই সঙ্গে মৃত ব্যক্তির ডিএনএ-র নমুনা মিলবে এমন কোনও পরিবারের ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, এই ডেথ সার্টিফিকেট এবং এবং ডিএনএ রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেই কারচুপি করেছিলেন অভিযুক্ত অমৃতাভ।
জীবিত মানুষকেই কাগজপত্রের মাধ্যমে ‘মৃত’ ঘোষণা করে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়া হয়। নথিতে ‘মৃত’ অমৃতাভ চৌধুরীর বোন রেলের একটি উর্ধ্বতন পদে সেই চাকরি পান। সেই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর রেলের অভ্যন্তরীণ অডিটে এই বেআইনি কার্যকলাপ ধরা পড়ে। অভিযোগ দায়ের করা হয় সিবিআই-এর দুর্নীতিদমন শাখায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে জোড়াবাগান থাকা এলাকায় অমৃতাভ চৌধুরীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই।
আরও পড়ুন: বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবেশ তৈরি, কেন্দ্র যে কোনওদিন ব্যবস্থা নিতে পারে: সায়ন্তন
প্রাথমিকভাবে যদিও অভিযুক্তকে ধরা যায়নি। এরপর গতকাল রাতেই অমৃতাভ চক্রবর্তী এবং তাঁর বাবাকে আটক করে সিবিআই। বর্তমানে তাঁদের নিজামে প্যালেসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, এর পিছনে একটি বড় চক্র কাজ করতে পারে। এই ধরনের ভুয়ো নথি জমা পড়লে সাধারণত গোড়াতেই তদন্তের সময় ধরা পড়ে। তাহলে কেন আগে এদের ধরা গেল না? তবে কি রেলের কোনও আধিকারিকও গোটা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে? আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সিবিআই।
আরও পড়ুন: ‘শান্তি ও মুক্তি চাই’, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলে ব্যাখ্যা জন বার্লার
জোড়াবাগান থানা এলাকার ৫ নম্বর গঙ্গা নারায়ণ দত্ত লেনে থাকেন অমৃতাভর পরিবার। আটকের পর প্রতিবেশীরা জানান, দুর্ঘটনার পর প্রায় ৭ বছর বাড়িছাড়া ছিলেন অমৃতাভ। রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন। সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। বছর সাতেক পরে ফিরে এলে প্রতিবেশীরা অনেকে জানতে পারেন এই বেআইনি কার্যকলাপের কথা। তাঁরা অমৃতাভর বাবাকে পরামর্শ দেন গোটা বিষয়টি জানিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করতে। যদিও তাতে রাজি হয়নি চৌধুরী পরিবের কেউ। শুক্রবার রাতে সিবিআইয়ের ৮-১০ জনের একটি দল এসে অমিতাভর ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল। সে খবরও জানেন প্রতিবেশীরা। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তের পরিবারের কেউ ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি।