‘শান্তি ও মুক্তি চাই’, পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলে ব্যাখ্যা জন বার্লার

"কী উন্নয়ন হয়েছে তৃণমূল আমলে? খালি ডুয়ার্স, উত্তরকন্যা বানালে উন্নয়ন হয় না। তিনি যোগ করেন, আলিপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলায় কম করে সাড়ে তিনশো চা বাগান রয়েছে। কিন্তু এখানকার মানুষ অন্য রাজ্যে চলে যান কাজের খোঁজে।

'শান্তি ও মুক্তি চাই', পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলে ব্যাখ্যা জন বার্লার
অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2021 | 5:19 PM

পশ্চিমবঙ্গ: পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এর আগে সরব হওয়া বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে অতীতে হাত মিলিয়েছে বিজেপি। সেই বিমল এখন তৃণমূলের সঙ্গী। পৃথক কামতাপুরী রাজ্যের দাবি উঠেছে এই উত্তরবঙ্গে। কিন্তু সেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। তবে একুশের বিধানসভা ভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর গোটা উত্তরবঙ্গকেই পৃথক রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা (John Barla)। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, সংসদের অধিবেশন খুললেই এই দাবিতে সরব হবেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে সমালোচনা শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

কিন্তু কেন পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি? শনিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মূলত রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসাকেই আসল কারণ হিসাবে উল্লেখ করলেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। তাঁর কথায়, “বাংলায় বড় জয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তার জন্য শুভেচ্ছা। কিন্তু গত ২ মে ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে বাংলায় হিংসা থামবার নামগন্ধ নেই। ভোটের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালন না করে রাজনৈতিক হিংসায় মেতেছে রাজ্যের শাসক দল।”

তাঁর কথায়, “বিজেপি কর্মীদের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে, তাঁদের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য সরকারি রেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু মানুষ। এমনকি ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছে না যে সব গরিব মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।”

বিজেপি সাংসদ যোগ করেন, “শুধু বিজেপিকে ভোট দেওয়ার অপরাধে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সুবিধা মিলবে না! এ কেমন উন্নয়ন? খুন হওয়া কার্যকর্তাদের পরিবার থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টে তাঁদের নামে মামলা হয়। কেন এ নিয়ে কিছু বলেন না মুখ্যমন্ত্রী? কেন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন না, এই সন্ত্রাস বন্ধ করুন। কেন বলছেন না, যারা এই ধরনের অপরাধ করছে, তাদের কড়া সাজা হবে?”

রাজ্যের বিজেপি সাংসদের দাবিতে সুর না মেলালেও নিজের অবস্থানে অনড় জন। তিনি বলেন, “কী উন্নয়ন হয়েছে তৃণমূল আমলে? খালি ডুয়ার্স, উত্তরকন্যা বানালে উন্নয়ন হয় না। তিনি যোগ করেন, আলিপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলায় কম করে সাড়ে তিনশো চা বাগান রয়েছে। কিন্তু এখানকার মানুষ অন্য রাজ্যে চলে যান কাজের খোঁজে। কেন নিজের রাজ্যে কাজ পাবেন না, কেন পরিবারের সঙ্গে তাঁরা থাকতে পারবেন না।” রাজ্য সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন জন বার্লার।

এখানেই শেষ নয়, বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, এ রাজ্যের মানুষ প্রতিবেশী রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন। আর রাজ্যে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশি অনুপ্রেবেশকারী। “যেখানে শান্তি নেই, উন্নয়ন নেই, যেখানে মানুষের কথা শোনার মত কেউ নেই, সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে উত্তরবঙ্গ পৃথক হওয়া উচিত।”

জন বার্লা আরও বলেন, চিন, ভুটান, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘিরে রয়েছে উত্তরবঙ্গকে। তাই উত্তরবঙ্গের শান্তি ও সুরক্ষার স্বার্থে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছেও দরবার করবেন তিনি।

আরও পড়ুন: ‘পৃথক উত্তরবঙ্গ’ বিতর্কে সুর সপ্তমে তৃণমূলের, পদ্মকে তুলোধোনা করে শুরু #BengalStandsUnited প্রচার

এদিকে রাজ্য বিজেপি জন বিরলার মন্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে। এদিন উত্তরবঙ্গের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়করা মিলে একটি বৈঠক করেন। সেখানে মিহির গোস্বামী, নিশীথ প্রামাণিকরা উত্তরবঙ্গের অনুন্নয়নের অভিযোগ করলেও কেউ পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি জানাননি। অন্যদিকে ওই একই জায়গা থেকেই নিজের অবস্থানে অনড় থেকে আরও সুর চড়ালেন জন বার্লা।