কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) মামলায় গ্রেফতার মানিক ভট্টাচার্যের (Manik Bhattacharya) জেল হেফাজত শেষে শুক্রবার ফের পেশ করা হয়েছিল ব্যাঙ্কশাল আদালতে। ইডির তরফে যে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলিকে এদিন আদালতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন মানিকের আইনজীবী। তাঁর শারীরিক সমস্যার বিষয়গুলিকেও তুলে ধরেন আদালতে। যে কোনও শর্তে জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী।
মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী বলেন, ২০২২ সালের ২৭ জুলাই থেকে তাঁর মক্কেল ইডি দফতরে বার বার গিয়েছেন। যে তথ্য জানা ছিল, তা জানিয়েছেন। তদন্তে সহযোগিতাও করেছেন। তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। সেই বয়ানে মানিক ভট্টাচার্য সই করেছেন। কিন্তু মানিক বাবুর আইনজীবীর বক্তব্য, এখনও তাঁরা অ্যারেস্ট মেমো হাতে পাননি। সেই সঙ্গে তাঁর আইনজীবী আরও বলেন, “জুলাই থেকে অক্টোবরের ৯ তারিখ পর্যন্ত মানিক ভট্টাচার্যকে যতবার ডাকা হয়েছে, তিনি গিয়েছেন। একবারও বলা হয়নি মানিক অসহযোগিতা করছে। তাহলে হঠাৎ করে অসহযোগিতা কোথায় হল?” উল্লেখ্য, ইডির তরফে রিমান্ড লেটারে অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার উত্তরে শুক্রবার মানিক ভট্টাচার্যর আইনজীবী এই কথা বলেন।
মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী এদিন আদালতে আরও জানান, যে অ্যাকাউন্টটি মানিকের স্ত্রী এবং অন্য এক জনের সঙ্গে জয়েন্ট রয়েছে, তাতে তিন কোটি টাকা আছে বলে দাবি করেছে ইডি। আসলে ওই অ্যাকাউন্টে আছে তিন লাখ টাকা। ১৯৮১ সাল থেকে চলছে ওই অ্যাকাউন্টটি। মানিকের স্ত্রীর সঙ্গে যে ব্যক্তির জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তিনি মারা গিয়েছেন। তিনি মানিকের স্ত্রীর পিসেমশাই।
মানিক ভট্টাচার্যর আইনজীবী এদিন আদালতে বলেন, মানিক শিক্ষাবিদ। যোগেশ চন্দ্র ল’কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেম। ৭০ বছর বয়স। ভিতরে থাকা মানে, তাঁর ওপর অত্যাচার। এর উত্তরে বিচারক বলেন, “ঠিক। এরকম মাপের একটা লোককে ইডি বা সিবিআই কোনও নথি ছাড়া, উপযুক্ত কারণ ছাড়া গ্রেফতার করে ফেলল!” মানিকের আইনজীবীর দাবি, ইডি’র ১৪ দিনের হেফাজত মানে ১৪ বছরের বনবাস। এত ‘আদরে যত্নে’ ছিলেন মানিক। তাই মানিকের স্বাস্থ্য, বয়সের কথা বিচার করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। যে কোনও শর্তে যাতে তাঁকে জামিন দেওয়া হয় সেই আর্জি জানান। মানিকের অতীতে বাইপাস অস্ত্রোপচারের কথাও আদালতে তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবী।
ইডির তরফে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবার পাল্টা দেন আদালতে। মানিক বাবুর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্যও তুলে ধরা হয় বিচারকের সামনে। ইডির আইনজীবী বলেন, “মানিকের নাম এফআইআর-এ নাই থাকতে পারে। আমরা পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এবং মানিকের জোরালো যোগ খুঁজে পেয়েছি। মানিকের স্ত্রী সুতপার নামে ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট পাওয়া গিয়েছে। উল্লেখ্য মানিকের স্ত্রীর সঙ্গে যে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টটি ছিল, সেটিতে অপর নামটি ছিল মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্য়ায়ের। ইতিমধ্য়েই মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলে সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ ওই মৃত ব্যক্তির নামে কেওয়াইসি জমা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মারা যাওয়ার তিন বছর পর কেওয়াইসি। এই কেওয়াইসি জমা দিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী।” নিজের স্ত্রীকে ঢাল করে দুর্নীতির টাকা আড়াল করেছে মানিক, এমনই জানান ইডির আইনজীবী।
ইডির তরফে এদিন আদালতে জানানো হয়, “মেসার্স ইডি ক্লাসেস অনলাইন নামে একটি নতুন কোম্পানির নাম পাওয়া গিয়েছে তদন্তে। মানিকের ছেলের নামে এই কোম্পানিতে ডিএলএড প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৫০০ টাকা এসেছে। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকাল পেয়েছে মানিকের ছেলের এই কোম্পানি। পার্থ এবং মানিকের হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট এর হদিশ মিলেছে। মানিকের ছেলের সংস্থার নামে অভিযোগ হয়েছিল। সেটা মানিককে পাঠান পার্থ। এর থেকেই পার্থ-মানিক যোগ স্পষ্ট। আর কী দরকার?”
মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী যে জামিনের আবেদন করেছিলেন, তার পাল্টা ইডির আইনজীবী ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন করা হয়। জেলে গিয়ে যাতে মানিককে জেরা করা যায়, সেই আবেদনও করেন ইডির আইনজীবী। ইডির আইনজীবীর বক্তব্য, “রাজ্যের ভবিষ্যতের কী হবে? অযোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে। এক একটা স্কুলে দুটি প্রজন্ম নষ্ট হবে।”