
কলকাতা: কলা বিভাগের পড়ুয়ারা পড়তে হয়, তাই পড়ে। শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই কথাই বললেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। কিন্তু কেন এই কথা বললেন তিনি? কোন প্রসঙ্গেই বা বললেন? এদিন প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পর্বের ফলাফল। প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে ৬৯ জন পরীক্ষার্থী। যাঁদের মধ্য়ে ৬৮ জন বিজ্ঞান বিভাগের ও ১ জন বাণিজ্য বিভাগের। সাধারণ ভাবে প্রতি বছরের মেধাতালিকায় কলা বিভাগের পড়ুয়ারা জায়গা পেলেও, এই বছর তাঁরা ছিটকে গেলেন, বলছেন একাংশ।
মেধাতালিকায় বিভাগীয় এই তফাৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যকে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই বিজ্ঞান বিভাগে ফলাফল খুব ভাল হচ্ছে। এটার একটা কারণ রয়েছে। সাধারণ ভাবে বিজ্ঞান বিভাগে একটু উৎসাহী ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে। তুলনামূলক ভাবে কলা বিভাগের একটা অংশের পড়ুয়া পড়তে হয়, তাই পড়ছে। এই বছর পরীক্ষার্থীর নিরিখে কলা বিভাগের পড়ুয়ার সংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগ ও বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারা ডেডিকেটেড। তাঁরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবেন বলেই এই বিভাগগুলি নেন।’
সায়েন্স-আর্টস, মাধ্য়মিকের পর পড়ুয়ার মনে তৈরি হওয়া সংশয়গুলির মধ্যে অন্যতম। আর এটি শুধু একটি সংশয় নয়, দ্বন্দ্বের জায়গাও বটে। হামেশাই দেখা যায়, নিজের অনিচ্ছায়, বাবা-মায়ের ‘চাপে’ বিজ্ঞান বিভাগে নাম লেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। কারণ, সায়েন্স নিলেই কেরিয়ার গড়বে, চাকরি মিলবে, এমনটাই মত একাংশের অভিভাবকের। এদিকে আর্টস বা কলা বিভাগ একাংশের কাছে হয়ে ওঠে ‘নিচু শ্রেণির’ পড়াশোনা। এদিন সংসদ সভাপতি কি সেই বিতর্কই উস্কে দিলেন? প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলের।
এই প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘অনেক গুণীজন রয়েছেন যাঁরা কলা বিভাগে পড়ে উন্নতি করেছেন। পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়েরা অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনার জন্য কলা বিভাগ বেছে নেন। সেক্ষেত্রে কলা বিভাগে পড়ুয়ারা কম গুরুত্ব সহকারে পড়াশোনা করে, এমনটা বলা যাবে না। চিরঞ্জীববাবু কোথাও গিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কথা বলছেন। যা কাম্য নয়। এতে একাংশের পড়ুয়ার মনে কলা বিভাগে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উৎসাহ কমবে।’
অবশ্য খাতায়-কলমে থাকা তথ্যকে এড়ানো যাবে না বলেই যুক্তি সংসদ সভাপতির। টিভি৯ বাংলাকে তিনি বলেন, ‘তথ্য এড়ানো সম্ভব নয়। উচ্চ মাধ্যমিকে সবচেয়ে বেশি কলা বিভাগের ছাত্র। বিজ্ঞানে বিভাগে যারা পড়়াশোনা করছে, তাঁরা ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং বা সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য় প্রস্তুতি নেন। ফলে তাঁরা সাবজেক্টের বিষয়ে অনেকটাই সিরিয়াস। আমার নিজের অনেক বন্ধু আর্টস পড়েছেন। দেশে-বিদেশে তাঁদের অনেক নাম। আমি কখনওই আর্টস পড়ার ক্ষেত্রে অনুৎসাহী করছি না। কলা বিভাগকে অসম্মান করার কোনও উদ্দেশ্য আমার নেই।’