কলকাতা: অনেকেই ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নিয়ে ফেলেছেন। অনেকের আবার প্রথম ডোজ় নেওয়া হলেও দ্বিতীয় ডোজ় নিতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে ফিরছে পথেঘাটে ভিড়। মাস্ক ছাড়াই দেদার চলছে জমায়েত। শারীরিক দূরত্ব এখন আর মানার প্রয়োজনই মনে করছেন না কেউ কেউ। আর এই সব কিছু ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতাই ফের শোনাচ্ছে বিপদের আগমনী। টানা চারদিন দেশের দৈনিক সংক্রমণ বুঝিয়ে দিচ্ছে আবারও সে আসিছে ফিরিয়া!
টানা চার দিন দেশের দৈনিক সংক্রমণ ৪০ হাজারের উপরে। চার দিনে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজারের বেশি মানুষের। ২৬ অগস্ট দেশে সংক্রমিত হন ৪৬,১৬৪ জন। মৃত্যু হয় ৬০৫ জনের। ২৭ অগস্ট আক্রান্ত হন ৪৪ হাজার ৬৫৮ জন। মৃত্যু হয় ৪৯৬ জনের। ২৮ অগস্ট করোনা আক্রান্ত হন ৪৬ হাজার ৭৫৯ জন। মৃত্যু হয় ৫০৯ জনের। ২৯ অগস্ট সেই সংক্রমণ ছুঁয়েছে ৪৫ হাজার ৮৩ জনকে। মৃতের সংখ্যা ৪৬০।
বার বার চিকিৎসকরা বলছেন, টিকাকরণ আমাদের সুরক্ষিত করতে পারে ঠিকই। ভ্যাকসিন কোভিড-বর্ম হতে পারে। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মাস্ক অত্যাবশ্যক বলছেন চিকিৎসকরা। কারণ, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টিকাকেও বলে বলে গোল দিয়ে দিতে সক্ষম। এমন কী জোড়া ডোজ় নেওয়ার পরও।
দিল্লির একটি হাসপাতালের ৬০০ স্বাস্থ্যকর্মীর উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই রিপোর্টই তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। ভ্যাকসিন নিতে হবে ঠিকই, তবে সেখানেই থেমে গেলে চলবে না। সতর্কতা যে কতটা জরুরি তা বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে তাবড় চিকিৎসক, গবেষকরা।
মাস্ক যে কতটা জরুরি তা প্রমাণ করে দিলেন বিজ্ঞানীরা। দেশে যখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের বাড়াবাড়ি দিল্লির একটি হাসপাতালের ৫৯৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর সমীক্ষা চালায় ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স অ্যান্ড ইনট্রিগেটিভ বায়োলজির (IGIB) একদল বিজ্ঞানী। শনিবার একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় একটি মেডিক্যাল আর্কাইভে।
সেই রিপোর্ট বলছে, ভ্যাকসিনকেও ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কোভিশিল্ডের ডোজ় নেওয়ার পরও আক্রান্ত ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। একটি ডোজ় নেওয়ার পর আক্রান্ত হয়েছেন এর অন্তত ৪৮.৪ শতাংশ। কোভিশিল্ডের একটি ডোজ় ডেল্টার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে ততটা সক্ষম নয়।
একবার সংক্রমণে তৈরি অ্যান্টিবডিও ডেল্টার বিরুদ্ধে যথেষ্ট নয়। তাই ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরতেই হবে বলছেন বিজ্ঞানীরা। আইজিআইবির গবেষকদের দলে রয়েছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী শান্তনু সেনগুপ্ত।
কিন্তু কেন ভ্যাকসিন সংক্রমণ ঠেকাতে পারছে না। আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গবের ব্যাখ্যা, এই ভ্যাকসিন রোগের প্রতিষেধক। প্রতিহতের জন্য নয়। অর্থাৎ সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও সংক্রমণের বাড়াবাড়ি ঠেকিয়ে দিতে সফল ভ্যাকসিন। সে কারণেই যে ৫৯৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল, কেউই সংক্রমিত হলেও গুরুতর অসুস্থ হননি। মূলত উপসর্গহীন সংক্রমণ, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। তবে জোড়া ডোজ়ের পরও মাস্কটা পরতে ভুললে চলবে না। আরও পড়ুন: স্পষ্ট বাংলায় জেহাদি বার্তা, কলকাতায় অবৈধ আফগানি মুদ্রা! সত্যি পশ্চিমবঙ্গ সুরক্ষিত তো?