কলকাতা : শেষ বিধানসভা ভোটের আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এমনকী তাঁর যোগদান পর্বে ছিলেন খোদ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। দুর্গাপুরের পলাশডিহিতে রাজু ঝার (Raju Jha Murder Case) হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি (BJP) নেতা দিলীপ ঘোষ। এই রাজুই শনিবার সন্ধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের (Shaktigarh) ১৯ জাতীয় সড়কের উপর ল্যাংচা হাবের কাছে খুন হয়ে যান। তাঁর মৃত্যুতে বিজেপির অন্দরে একাধিক মত উঠে আসছে।
রাজুর মৃত্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তিনি বলেন, “রাজু ঝা নির্বাচনের আগে আমাদের পার্টিতে যোগদান করেছিল। এখন তো গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বোমা-বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কারও জীবনে কোনও সুরক্ষা নেই। একজন বড় ব্যবসায়ীকে যেভাবে হাইওয়ের উপরে খুন করা হয়েছে তাতে পশ্চিমবাংলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। আশা করছি ঘটনার তদন্ত ঠিকঠাক হবে।” তবে, সুকান্ত মজুমদার রাজুর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ভোটের সময় এমন অনেকেই জয়েন করেছে দলে। লোকটি আগে তৃণমূল করত। তার আগে বাম করত।
এদিকে রাজু ঝার বিজেপিতে যোগদান নিয়ে সে সময় দলের মধ্যেই আড়াআড়ি বিভাজন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বলে খবর। সেই সময় দলে ছিলেন তৎকালীন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। রাজুর যোগদান নিয়ে তিনি সরাসরি আপত্তিও তুলেছিলেন। দলের একাংশের কর্মীদের মধ্যেও বাড়তে থাকে অসন্তোষ। যদিও দলে যোগদানের পর ভোটে তাঁকে দলের তরফে টিকিট দেওয়া হতে পারে বলেও ছড়ায় জল্পনা। যদিও শেষ পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়নি। এরইমধ্যে একটি প্রতারণার মামলায় তাঁর জেলও হয়। অনেকেই বলছেন বিজেপিতে যোগ দিলেও সক্রিয় রাজনীতিতে তাঁকে খুব একটা দেখতে পাওয়া যায়নি।
এ দিন চক্রান্ত তত্ত্ব নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা যায় দিলীপকে। তিনি বলেন, “এর পিছনে কী চক্রান্ত সে তো পরে জানা যাবেই। তবে আমাদের সন্দেহ রাজু ঝাকে একবার ডেকেছিল সিবিআই। তিনি বহু লোকের নাম বলেছেন। সেখানে তৃণমূলের অনেক নেতার নামও হয়তো বলেছেন। তদন্ত এগোলে উনি আরও অনেক নাম বলে দিতে পারেন। তাই ওনার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” একই সুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের গলাতেও। তিনি বলেন, “লোকটি আগে তৃণমূল করত। ভোটের আগে বিজেপি জয়েন করেছে। অনেকেই করে। কিন্তু, মাফিয়া বলে তাকে কী রাস্তায় শুট-আউট করতে পারেন? তাঁর কাছে হয়তো গোপন তথ্য ছিল, তাই আগে তাকে মারা হল।”
সূত্রের খবর, বাম আমলে তদানন্তীন শাসকদলের রীতিমতো ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই রাজু। পরবর্তিতে রাজ্যে পালাবদলের পর ভাল সম্পর্ক ছিল তৃণমূলের সঙ্গেও। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত তাঁর কয়লার কারবারে রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ দুর্গাপুরে একের পর এক ব্যবসা শুরু করেছিলেন রাজু। রেস্তোরাঁ, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, পার্কিং জোন, শপিং মলের ব্যবসা করে আরও ফুলেফেঁপে ওঠেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কয়লার কালো কারাবার সুরক্ষিত রাখতেই বারবার তিনি বিভিন্ন সময় শাসকদলের শরণাপন্ন হয়েছেন। বাম থেকে তৃণমূল দুই আমলেই দেখা গিয়েছিল একই ছবি।
এদিকে রাজু যখন বিজেপিতে যোগ দেন তখনও দলে ছিলেন অর্জুন সিং। এমনকী রাজুর হাতে দলীয় পতাকাও তুলে দিতে দেখা গিয়েছিল অর্জুন সিংকে। সেই অর্জুন বলেন, “ও পুরোপুরি ব্যবসায়ী হয়ে গিয়েছিল। গুন্ডামি-মাস্তানিতে এখন ওর কোনও নাম নেই। আগে হয়তো কিছু করেছিল তাই একটা ট্যাগ লেগে গিয়েছিল। তবে ১ বছর ধরে ওর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। তবে এমন কিছু ছিল না যার জন্য ও খুন হতে পারে।”