
কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে আগে রাজ্যে এসে কী বার্তা দেন তিনি, সেদিকেই নজর সব মহলের। আজ দমদমে সভা রয়েছে তাঁর। তার আগে কলকাতা শহরে মোট তিনটি নতুন মেট্রো রুটের উদ্বোধন হবে তাঁর হাত ধরে।
কলকাতায় মেট্রোর তিন রুটের উদ্বোধনে এসেও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বিস্ফোরক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দমদমের সভামঞ্চ থেকে মোদী সুর চড়ালেন, বাংলার অনুপ্রবেশকারীদের এতই বাড়বাড়ন্ত, তার জন্য বাংলার যুবকদের ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হয়। তাঁর কথায়, “বাংলায় অনুপ্রবেশ সামাজিক সঙ্কট তৈরি করেছে।” তাঁর হুঙ্কার, “একবার ভোট দিন, সব অনুপ্রবেশ পালাতে শুরু করবে।”
বছর ঘুরলেই বাংলায় মহা-ইভেন্ট। তার আগে ‘বাঙালি অস্মিতা’- এই শব্দ বন্ধ এখন বঙ্গ রাজনীতির জ্বলন্ত ইস্যু। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শাসক-বিরোধী-প্রত্যেক দলের নেতৃত্বের মুখে ঘুরেফিরে আসছে বাঙালি অস্মিতা রক্ষার কথা! বাঙালি অস্মিতা রক্ষার্থে আদতে কে ব্যর্থ, তা নিয়ে যুযুধান প্রতিপক্ষ একে অপরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে, উত্তাল হচ্ছে সংসদ! শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে আরও একবার উঠে এল সেই প্রসঙ্গ। দমদমের বক্তৃতায় বাংলায় উন্নয়ন, আর সেক্ষেত্রে বিজেপি সরকার আনা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই জুড়ে ছিল মোদীর ভাষণে। আর সবটা জুড়ে ছিল বাংলা ও বাঙালি। সে বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মন্দিরের নামই হোক, কিংবা মণীষীদের নাম! আর সর্বোপরি বাংলায় গান! মোদীর মুখে সবটা জুড়ে ছিল বাংলা।
বিজেপি যা ভাবে, তা করে দেখায়। তার তাজা প্রমাণ অপারেশন সিঁদুর। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতির উন্নয়নে বিজেপি নিয়োজিত। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে কেন্দ্র। বাংলাকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিতে চাই, যেখানে বাংলার একজন যুবককেও কাজের জন্য বাইরে যেতে না হয়। দেশের সবচেয়ে বড় চিন্তা অনুপ্রবেশীদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে। বাংলার মানুষ সময়ের আগে চিন্তা করে। রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনার কথা আপনাদের বলি। একবার ভোট দিন, সব অনুপ্রবেশ পালাতে শুরু করবে
যে অনুপ্রবেশরা আমাদের যুবাদের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে, নারী নির্যাতন করছে, তাদের আমরা দেশে থাকতে দেব না। ভারত সরকার এজন্য এত বড় অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু ইন্ডি জোট তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে। অনুপ্রবেশকে সমর্থন করছে। বাংলায় অনুপ্রবেশ সামাজিক সঙ্কট তৈরি করছে,
এটা থামাতেই হবে। এজন্য আমি লালকেল্লা থেকে ডেমোগ্রাফিক মিশনের ঘোষণা করেছি।
জনতার কাছে প্রকল্পের সমস্ত সুবিধা পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন, বাংলায় বিজেপি সরকার। তৃণমূল যাবে, বিজেপি আসবে- (স্লোগান মোদীর)। এই ধরিত্রী সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র দাশগুপ্তদের। দেশে সময় উপযোগী চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছে। এই ধরিত্রী কেবল পুনজাগরণের কেন্দ্র নয়। এখানেই অমর বাণী তৈরি হয়েছে, যেটা বলে, জাগো… ওঠো… নবজীবনের গানে… নবআলো জ্বালাও প্রাণে প্রাণে….
আজ বাংলায় সত্যি নতুন আলোর প্রয়োজন। সত্যিই পরিবর্তনের প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর প্রথমে কংগ্রেস, পরে বামেদের লম্বা দৌড়, ১৫ বছর আগে বাংলায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মা-মাটি-মানুষের ওপর ভরসা করে। কিন্তু পরিস্থিতি আগের থেকেও খারাপ হয়েছে। যুবদের ভবিষ্যৎ খারাপ, নারীদের ওপর অত্যাচার, আইনশৃঙ্খলার অবনতি সব হয়েছে। তৃণমূল থাকলে বাংলার বিকাশ অবরুদ্ধ থাকবে।
শহরের দূর দূরের প্রান্ত থেকে বিমানবন্দর পৌঁছানো এখন সহজ হয়ে গেল। জনসংখ্যার বিচারের দেশের সবথেকে বড় রাজ্য বাংলা। তাই এখান থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত জনসমর্থন বেশি পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ বিকশিত ভারত করা সম্ভব নয়। বিজেপির কনভিকশন আছে, বিজেপির লক্ষ্য বাংলার উদয়, তখন বিকশিত ভারতের জয়। গত কয়েক বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাংলার বিকাশের জন্য সবরকমের সাহায্য করেছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে নির্মাণের জন্য যত টাকা কংগ্রেসের UPA সরকার ১০ বছরে দিয়েছে, তার থেকে ৩ গুণ বেশি টাকা বিজেপি সরকার দিয়েছে। রেলওয়ের ক্ষেত্রেও বাজেট ৩ গুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাংলায় বিকাশকারীদের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলার জন্য যে টাকা আমরা রাজ্য সরকারকে সরাসরি দিই, তার বেশিরভাগই লুঠ হয়ে যায়। আপনাদের ওপর খরচ হয় না। মহিলাদের জীবন সুযোগ করার জন্য খরচ হয় না। তৃণমূলের ক্যাডারের ওপর খরচ হয়। গরিব কল্যাণের অনেক প্রকল্পে বাংলা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে। কিছু বছর আগে, অসম, ত্রিপুরার একই অবস্থা ছিল। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গরিবরা উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছেন।
ফের একবার বাংলায় উন্নয়ন করার সুযোগ পেলাম। হাওড়া ও শিয়ালদহ, সবথেকে ব্যস্ততম দুটো স্টেশন এখন মেট্রোর সঙ্গে জুড়ে গেল। আগে যে পথ পেরোতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যেত, এখন মেট্রোয় কয়েক মিনিটই লাগবে। বিশ্বের তৃতীয় মেট্রো নেটওয়ার্ক এখন ভারত। ২০১৪ সালের আগে দেশে ২৫০ কিমি মেট্রো রুট ছিল। বর্তমানে দেশে মেট্রো রুটের দৈর্ঘ্য ১০০০ কিমির বেশি। কলকাতা হল ভারতের ইতিহাস ও সমৃদ্ধির পরিচায়ক।
দমদম সেন্ট্রাল জেল মাঠে ‘পরিবর্তন সংকল্প যাত্রা’ সভায় বলতে উঠে প্রথমেই বাংলায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সবাই আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালবাসা।” এরপরই তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির ও কালীঘাট মন্দির-সহ একাধিক মন্দিরের কথা উল্লেখ করে ‘প্রণাম’ জানান।
উত্তরীয় পরিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানান শুভেন্দু অধিকারী। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, “বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আপনিই পারবেন, বাংলাকে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করতে।” তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে হঠানোর ডাক দেন তিনি। শুভেন্দুর পর বক্তব্য রাখতে উঠে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একসঙ্গে ভোট দেবে সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল। কলকাতার রাস্তায় মিছিল করুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহম্মদ সেলিম। যতদিন বিজেপি থাকবে, কোনওদিন বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হিন্দুর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না। কোনও ভারতীয় মুসলিমকে কেউ ছুঁতে পারবে না। তৃণমূলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। ছাব্বিশে কোনও শক্তি তৃণমূলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না”
নতুন তিনটে মেট্রো রুটের উদ্বোধনের পর দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দান থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি নানা প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করে মোদী বলেন, “আজ নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সফর করেছি। অনেকের সঙ্গে কথা হল। খুব আনন্দ হয়েছে। ভারত আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে। সেখানে দমদম, কলকাতার বড় ভূমিকা থাকবে।” হাওড়া থেকে শিয়ালদহ মেট্রোর নতুন রুট চালু হওয়ায় যাত্রীদের অনেক সময় বাঁচবে বলে প্রধানমন্ত্রী এদিন মন্তব্য করেন।
মেট্রোর নতুন তিনটে রুটের উদ্বোধনের পর দমদম সেন্ট্রাল জেল ময়দানে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে সরকারি একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন তিনি। তারপর জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
যশোর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে নতুন তিনটে রুটের উদ্বোধনের পর দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠের দিকে রওনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। রাস্তার দু’ধারে উপচে পড়ে সাধারণ মানুষের ভিড়। ‘মোদী মোদী’ স্লোগান দিতে থাকেন সাধারণ মানুষ। গাড়ির মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রীকেও হাত নাড়তে দেখা যায়।
দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান। মেট্রোর নতুন তিনটে রুটের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যশোর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে তিনটে নতুন মেট্রো রুটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয় যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে যাওয়ার পথে রাস্তার দু’ধারে ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। মোদীকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন। প্রধানমন্ত্রীকেও দেখা যায়, গাড়ি থেকে হাত নেড়ে সাধারণ মানুষকে অভিবাদন জানাতে।
বিমানবন্দরের ৪ নম্বর ভিভিআইপি গেট গিয়ে বেরলো প্রধানমন্ত্রীর কনভয়। এখান থেকে যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে পৌঁছবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনটি মেট্রো রুটের উদ্বোধন করবেন।
বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে পাটনা থেকে কলকাতায় অবতরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ইতিমধ্যেই কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি প্রমুখ। উপস্থিত রয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।
নতুন মেট্রো ঘিরে সকাল থেকেই ভিড় করেছেন উৎসাহী জনতা। এয়ারপোর্ট থেকে শিয়ালদহ সর্বত্রই চোখে পড়ছে ভিড়। নতুন রুট চালু হয়ে গেলে সুবিধা হবে বহু মানুষের।