কলকাতা: ‘পার্কিং ফি’ বিতর্ক। আর সেই বিতর্কের পর আবেগপ্রবণ কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর গলায় কি ঝরে পড়ল একরাশ অভিমান? তিনি বলেছেন, “২৫ বছর ধরে মানুষের সেবা করেছি। এখন বয়স হয়েছে। মানুষ আসবে, মানুষ যাবে। উন্নয়ন থেকে যাবে। আজকের প্রজন্ম সমাজের মাথা হবে। চেতলায় নতুন ফিরহাদ তৈরি হবে।” আর ববি হাকিমের এই মন্তব্যের পরই তৈরি হয়েছে নতুন করে জল্পনা। অপরদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলছেন, রাজ্যের মন্ত্রী জীবনদর্শনের কথা বলেছেন।
রবিবার চেতলার একটি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আজকে ২৫ বছর আমি এখানকার কাউন্সিলর। ২৫ বছর আপনাদের সেবা করেছি। নিশ্চিতভাবে বয়স হয়েছে। একটু আগে শ্মশান থেকে আমার এক দাদাকে দেখে এলাম। হয়ত কিছুদিনের মধ্যে আমারও সেই সময় এসে যাবে। কিন্তু মানুষ আসবে, মানুষ যাবে। সমাজ থাকবে, উন্নয়ন থেকে যাবে। নতুন প্রজন্ম সমাজের মাথা হবে। উন্নয়ন করবে। তাঁদের মধ্যে দিয়েই আবার এই চেতলায় একটা ববি হাকিম আসবে।”
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ববি হাকিম যা বলছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি চেতলা অঞ্চলের অভিভাবক। তিনি বলছেন যে, চেতলায় একজন নতুন ফিরহাদ হাকিম তৈরি হবে। তা নিয়ে যদিও বিতর্ক নেই। তবে এই রকম সময়ে ববি হাকিমের এহেন মন্তব্যে কিছুটা হলেও অভিমানের সুর ধরা পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদদের একাংশ।
ওয়াকিবহাল মহলের যুক্তি, পার্কিং ইস্যুতে খোদ মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন যা ঘটেছে তা ‘অনভিপ্রেত’। পার্কিং ফি বাড়ানো নিয়ে খোদ মুখ্য়মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে পারতেন। যা তিনি সরাসরি না বলেও, প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এই বিষয়টিকে কেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে আনা হল? তবে শুধু পার্কিং ইস্যু নয়, এমনকী সাগরদিঘির শোচনীয় পরাজয়েও দলেরই কেউ-কেউ ফিরহাদ হাকিমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন বলে সূত্র মারফত খবর। সেই কারণে তিনি আরও বেশি অভিমানী হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এর মধ্যে আবার পার্কিং ইস্যু! সব মিলিয়ে মন্ত্রী মনে করছেন দীর্ঘ বছর তিনি রাজনীতি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী হয়েছেন, মন্ত্রিত্ব চালিয়েছেন, পুরসভা চালাচ্ছেন। সেই জায়গায় তাঁকে যদি কিছু বলতে হত, দলীয় সুপ্রিমো বলতে পারতেন। সাংবাদিক বৈঠক করে এ হেন মন্তব্য কেন?
যদিও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “এখানে কোনও বিতর্ক দেখতে পাচ্ছি না। একটা ছোট্ট ইস্যু ছিল। চ্যাপ্টার ক্লোজড। ববিদা সিনিয়র নেতা। তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ মারা গিয়েছিলেন। সেই কারণে একটা জীবন দর্শনের কথা বলেছেন। তার সঙ্গে চলতি কোনও ইস্যু দেখতে পাচ্ছি না।
এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “জীবন দর্শন কিছু না। ল্যাং খেয়ে চিতপাত হয়ে পড়ার পর বাস্তব সামনে এসেছে। এই রকম অনেককেই বলতে শুনেছি। এই কিছুদিন আগে তাপস রায় বলেছিলেন আমি আর নেই,আমি আর নেই,আমি আর নেই। তারপর যেই আবার দমদমের প্রেসিডেন্ট করে দিয়েছে সঙ্গে-সঙ্গে বলছে আমি আছি। আমি সব। এই সব কোনও কথা নয়। আসলে এটা বলে দিদির নজর কাড়তে চাইছে। বলতে চাইছে দিদি আমি দুঃখ পেয়েছি এবার আমি ছাড়ব। ওই চেয়ারে নেতাজী বসতেন। ওই চেয়ার কলুষিত করার অধিকার ওনার নেই। আসলে নেত্রীর নজর কাড়তে চাইছেন। সেটেল হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”