কলকাতা: শুরু হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি। প্রশাসনিক মহলেও তৎপরতা তুঙ্গে। পাহাড়েও তার আঁচ পড়েছে। পাহাড়েও শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি।
সূত্রের খবর, পাহাড়ে ইতিমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কত জন ভোটারের জন্য এক জন করে জনপ্রতিনিধি থাকবে, বিধানসভায় সেই সংক্রান্ত বিলা আনা হচ্ছে। বিলে কেবল পার্বত্য এলাকার ক্ষেত্রেই জানানো হয়েছে।
মূলত, পঞ্চায়েত এলাকায় কতজন ভোটদাতার জন্য একজন জনপ্রতিনিধি থাকবেন, সেই বিষয়েই এই বিল। এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ৭০০ জন পিছু এক জন করে জনপ্রতিনিধি থাকবেন। পাশাপাশি, সমতলের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রে ৯০০ জন ভোটার পিছু একজন করে জনপ্রতিনিধি থাকবেন।
সংশোধনী বিল অনুযায়ী, পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে বা পার্বত্য এলাকায় প্রতি ৩০০০ জন ভোটদাতা পিছু একজন করে জনপ্রতিনিধি থাকবেন। পাশাপাশি এই সংশোধনী বিলে দার্জিলিং ছাড়াও কালিম্পং জেলাকে অর্ন্তভুক্ত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দ্বিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য আসন পুনর্বিন্যাস ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন?
পঞ্চায়েত দফতর আর রাজ্য নির্বাচন কমিশন আলোচনায় উঠে আসে যে ২৫০ জন ভোটার পিছু একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হলে তাতে ভোট প্রক্রিয়ায় আর্থিক খরচ বাড়ে।
কেন বাড়বে আর্থিক খরচ?
অল্প ভোটার পিছু জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হলে বুথের সংখ্যা বাড়ে। তার ফলে অতিরিক্ত বুথের প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার বেশি যেমন লাগবে, তেমনই ভোট প্রক্রিয়ার জন্য কর্মী বেশি লাগবে। ভোটের সময়ে অতিরিক্ত গাড়ি লাগবে। সব মিলিয়ে খরচ বেশি হয় অল্প ভোটার পিছু একজন জন প্রতিনিধি হলে বলেই পঞ্চায়েত দফতর আর কমিশনের বৈঠকে উঠে আসে। তার সঙ্গে বলা হয়, রাজ্যের বর্তমান জন ঘনত্ব অনুসারে এত কম ভোটার পিছু জন প্রতিনিধি নির্বাচন অর্থহীন।
তবে শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নয়, ভোটার সংখ্যার হারে জনপ্রতিনিধিত্বের বদল আসছে পাহাড়ের পঞ্চায়েত সমিতির স্তরেও। সেখানে এতদিন ২০০০ ভোটার পিছু একজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ ছিল। এবার তা বেড়ে হবে ৩০০০ ভোটার। ৩০০১ হলে আরেকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন পাহাড়ি এলাকার পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে।
২০০৭ সালে রাজ্যের অন্যত্র ভোটার পিছু জন প্রতিনিধি সংখ্যা বদল হলেও পাহাড়ে তা করা হয়নি। অবশেষে সেখানেও বদল হচ্ছে।
সংখ্যার নিরিখে বিল পাশ হবে বলে রাজ্য প্রশাসনের। ফলে তার পরে আসন পুনর্বিন্যাস হবে। সেই প্রক্রিয়া শেষের পরে আসন সংরক্ষণ কাজ হবে। আর তা শেষের পরেই ভোটের দিনক্ষণ স্পষ্ট হবে বলে মত রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের অনেকের। সেই অংশের কারও কারও পাহাড়ের পঞ্চায়ের ভোট সম্পর্কে বক্তব্য, “ভোট না হলে এই বিল আনার প্রয়োজন পড়ত না। ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এই বিলের।”
উল্লেখ্য, পাহাড়ে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল দুই দশক আগে। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলে জিটিএ বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অভাবে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে উন্নয়ন সেভাবে হচ্ছিল না বলে অভিযোগ উঠছিল। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দাবি উঠেছিল আগেই। পাহাড় নিয়ে যখন অন্য রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করছেন বিরোধীরা, তখন পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার।