কলকাতা: বেশি কিছু নয়। চপ-মুড়ি, চাউমিন। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও শেষবার একরকম ‘নিয়মবহির্ভূত’ খাবারই খেতে চেয়েছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী (Subrata Mukherjee)। সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে সে অভিলাষ আর পূরণ হয়নি মন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই কথা বলার কিছু সময় পরেই মৃত্যু হয় সুব্রতবাবুর। এদিন, এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
সুব্রতবাবুর আইনজীবী মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে মুড়ি-চপ, চাউমিন খেতে চেয়েছিলেন। সেকথা নিজে মুখেই বলেছিলেন। কিন্তু,তারপরেই তাঁর দাঁতে দাঁত লেগে যায়। কিছু সময় পরে বাথরুমে যান। সেখানেই শেষ। বাথরুম থেকে বেরনোর পরেই হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। তারপরেই সব শেষ! ইচ্ছে মতো পছন্দের খাবারও তাঁর খাওয়া আর হল না।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই সুব্রতবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এসএসকেএম সূত্রে খবর, স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন মন্ত্রী। কিছুদিন আগেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। কার্ডিওলজি বিভাগে আইসিইইতে ভর্তি তিনি। সেখানেই স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে সুব্রত মুখোপাধ্যায় আক্রান্ত হন। সেই স্টেন্টের জায়গায় রক্ত জমা বেঁধে যায়। ফলে সেই স্টেন্ট বের করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। এরপরই দ্রুত বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরা সবরকম চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাপোর্টে তাঁকে রাখার চেষ্টা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
৭৫ বছর বয়সী মন্ত্রী সম্প্রতি শ্বাসের কষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি সিওপিডির সমস্যা ছিল তাঁর। ১ নভেম্বর দু’টি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শরীরে। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে কার্ডিও ওয়ার্ড থেকে উডবার্নে নিয়ে যাওয়া হয়। আচমকাই সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর।
দীর্ঘদিনের রাজনীতিক তথা মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে প্রবেশের কিছু সময় পর বেরিয়ে আসেন দুঃসংবাদকে সঙ্গী করে। পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে ‘দাদা’ বলেই সম্মোধন করতেন তৃণমূল নেত্রী। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মমতা। শোকস্তব্ধ গলায় বললেন, “সুব্রতদার শেষ যাত্রায় আমার থাকা সম্ভব নয়। সুব্রতদার দেহ আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।”
গলার স্বর বসে গিয়েছে। যে মমতা তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য ভূ-ভারতে পরিচিত, সেই তিনিও আজ সাংবাদিকদের সঙ্গেও বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলেন না। ম্রিয়মান গলায় বলে গেলেন, “আমি অনেক দুর্যোগের সাক্ষী। কিন্তু সুব্রতদার মৃত্যু আমার কাছে অনেকে বড় দুর্যোগ। কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি কিছু বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। এত হাসিখুশি একজন মানুষ…”
শুধু মমতা নন, ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত মন্ত্রীর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। টুইট করে তিনি লিখেছেন, “প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও সমর্থকদের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করছি। তাঁর আত্মা চির শান্তি লাভ করুক। ওম শান্তি।” টুইটে শোকপ্রকাশ করেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচন হোক, জানি, তাতে বিশেষ সুবিধা হবে না…’