
কলকাতা: গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ দিয়ে চেনা। সুকুমার রায়ের ‘গোঁফ চুরি’ কবিতার এই লাইনটা কেউ কেউ মজা করে বলেন, নামের আমি, নামের তুমি, নাম দিয়ে যায় চেনা। দেখুন তো এই নামগুলো চেনেন কিনা! এই ধরুন পার্থ বা অর্পিতা। কিংবা জীবনকৃষ্ণ। নিদেনপক্ষে চুনোপুঁটি শান্তনু। কী মনে হচ্ছে না, SSC দুর্নীতিতে বহু চর্চিত নাম এগুলি। গোঁফচুরি নয় এখানে হচ্ছে ‘চাকরি চুরি’। SSC-র তরফে যে দাগি শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে একাধিক পার্থ, অর্পিতা রয়েছেন। রয়েছেন জীবনকৃষ্ণও। কাকতালীয় হলেও এটা সত্যি।
সালটা ২০২২। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একা পার্থ নন, তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়। তাঁর ফ্ল্যাটে কোটি কোটি টাকা দেখেছে গোটা বাংলা। সেই শুরু। তারপর তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে গ্রেফতারির সংখ্যা। সেই তালিকায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা, তৃণমূলের যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও একাধিক প্রভাবশালীর নাম। এদের সকলের (অর্পিতা বাদে) বিরুদ্ধেই অভিযোগ একটাই অযোগ্যদের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। শনিবার সেই অযোগ্যদের লিস্ট বের করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। আর সেখানেই দেখা গেল এই তালিকায় রয়েছেন, আরও পার্থ-অর্পিতা-জীবনকৃষ্ণদের ছড়াছড়ি।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কারা অযোগ্য প্রার্থী তাঁদের নাম আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই নির্দেশ মেনে শনিবার (৩০ অগস্ট) অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। আর তালিকা প্রকাশ করতেই দেখা গেল পার্থ নামে রয়েছে ৬ জন অযোগ্য, অর্পিতা নামে রয়েছে ২ জন ও জীবনকৃষ্ণ নামে রয়েছে ১ জন অযোগ্য। তবে এদের কারওই পদবির মিল নেই। শুধু নামের মিল আছে অভিযুক্তদের। প্রকাশি তালিকার ৯৯১ নম্বর থেকে ৯৯৬ পর্যন্ত রয়েছে এই পার্থদের নাম। আর অর্পিতার নাম রয়ছে ১৬৩ ও ১৬৪। আর জীবনকৃষ্ণের নাম রয়েছে ৫৭০-এ।
এ দিকে, লিস্ট প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। একের পর এক তৃণমূল নেতা-বিধায়ক ও তাঁদের ঘনিষ্ঠদের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। কখনও কারও মেয়ের নাম এসেছে, কখনও আবার ঘনিষ্ঠের নাম। আর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে সেই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল। তারপর থেকেই অযোগ্য কারা তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আনা নিয়ে সরব হন সকলে।
মজার ব্যাপার এক পার্থ টাকা নিয়েছে, অন্য পার্থ টাকা দিয়েছেন। ফারাক এইটুকুই একজন অভিযুক্ত, অন্যজন দাগী। আর তার মাঝে শেষ হয়ে গেলেন কয়েক হাজার নিরাপরাধ শিক্ষক-শিক্ষকরা। শেক্সপিয়ারকে ধার করে কেউ হয় তো বলবেন, নামে কী বা এসে যায়…কিন্তু এখানে তো এসে যায়…তাই না!