
নয়াদিল্লি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায় নয়, ‘বঙ্কিমদা’। সোমবার লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে ‘বন্দে মাতরম্’ নিয়ে আলোচনাপর্বের শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত ঠিক এই সম্বোধনেই ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় গোটা ভাষণজুড়ে যেমন বাংলার ঐতিহ্যের কথাও বললেন, ঠিক তেমনই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়কে ‘বঙ্কিমদা’ বলেই সম্বোধন করেছেন তিনি।
তবে বেশিক্ষণ নয়, মোদীকে থামিয়েই গর্জে উঠেছিলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। ভাষণের মাঝেই এই সম্বোধনকে রূঢ় বলেই আপত্তি তোলেন তিনি। বলেন, ‘অন্তত বঙ্কিমবাবু বলুন’। সঙ্গে সঙ্গে ভুলটা সংশোধনও করে নেন প্রধানমন্ত্রী। গুরুত্ব দেন বিরোধী সাংসদের তোলা অভিযোগে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা, বঙ্কিমবাবু বলছি।’ এরপরেই সৌগতকে দাদা বলে সম্বোধন করে ধন্যবাদও জানান। পাশাপাশি খানিক মশকরার সুরে সৌগতর উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘আপনাকেও তো দাদা বলে ডাকতে পারি তো?’
তবে এই সম্বোধনে ঘোর আপত্তি তৃণমূল শিবিরের। যে মুখে বাঙালি ঐতিহ্য নিয়ে এত প্রশংসা, সেই মুখেই কীভাবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়কে দাদা বলে সম্বোধন? প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য়ের শাসকশিবির। এদিন সংসদ কক্ষেই তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘আমার কাছে ইতিমধ্য়ে কয়েকশো টেলিফোন এবং মেসেজ এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়কে বঙ্কিমদা বললেন, মনে হল যেন চায়ের আড্ডায় বসে তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। কিন্তু বলে রাখি, বাংলা ও বাঙালি এটাকে ভাল ভাবে নিচ্ছে না।’ এই প্রসঙ্গে এখনও বিজেপির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সোমবার ‘বন্দে মাতরমের’ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্তবক বাদ পড়া নিয়েও সরব হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাহাত্ম্য গান্ধীর একটি লেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গান্ধীজি লিখেছিলেন, এই গান এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে মনে হচ্ছে, এটা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। এই গান সত্যিই মহান। অন্য রাষ্ট্রগানের থেকে বেশি মধুর।’ কিন্তু যে গানকে গান্ধীজি জাতীয় সঙ্গীতের স্থানে বসিয়েছিলেন, সেই গানের সঙ্গে কংগ্রেস বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ তাঁর। মোদীর কথায়, ‘নেহরু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল বন্দে মাতরম্ মুসলিমদের প্ররোচিত করতে পারে। এটা আসলেই অন্যায়, অবিচার এবং বিশ্বাসঘাতকতার সমান।’