কলকাতা: বাম যুব কর্মীর মৃত্যু ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। বাম-ডান দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছে। তবে সিপিআইএম, কংগ্রেসের দাবি, পুলিশই নৃশংসভাবে খুন করেছে ৩১ বছর বয়সী ডিওয়াইএফআই নেতা মইদুল ইসলাম মিদ্যাকে। পাল্টা তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া, এই ঘটনায় কোনও প্ররোচনা ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাম ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানে আহত হন মইদুল। ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে দাবি, তাঁর মাথায় পুলিশের লাঠির আঘাত লাগে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শেষ রক্ষা করা যায়নি। সোমবার মৃত্যু হয় তাঁর। মইদুলের কিডনি ফেলিওর হয়। এ দিন সকালে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাঁকুড়া কোতুলপুরের এই যুব নেতা।
আরও পড়ুন: ‘লাঠির আঘাতে কিডনি ড্যামেজ’, নবান্ন অভিযানকারী ডিওয়াইএফআই কর্মীর মৃত্যু
সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “পুলিশের নৃশংস আক্রমণে খুন হয়েছে মইদুল ইসলাম মিদ্যা। নারকীয় এই ঘটনায় নিন্দার কোনও ভাষা নেই। ছাত্র যুবদের ঘিরে ধরে যে ভাবে সে দিন মারা হল জালিয়ানওয়ালাবাগের স্মৃতি উস্কে দেয়। এটা কী চলছে বাংলায়? যে ভাবে সে দিন পুলিশ ওকে ঘিরে ধরে মারল এটা সাধারণ মৃত্যু নয়, খুন। নবান্ন অভিযানে শহিদ মইদুল। এ তো সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যু মনে করাচ্ছে। কত নৃশংস হতে পারে পুলিশ তা বোঝা যাচ্ছে। কত লাশ চাই সরকারের যে একটা জলজ্য়ান্ত ছেলেকে লাশ বানিয়ে দিল!”
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “জল্লাদের সরকার চলছে। কীভাবে নিন্দা করব জানি না। এই সরকার হত্যাকারীর সরকার।”
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। যখন দেখা যাচ্ছে পুলিশের দিকে ইট মারা হচ্ছে, পুলিশকে রাস্তা অবরোধমুক্ত করতে বেশ খানিকটা তৎপর হতে হয়েছে। এটা একটা বাস্তবের দিকও রয়েছে। ফলে এতে যদি কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে সেটা একটা ঘটনাক্রম। কখনওই কাউকে মারে ফেলার জন্য মারা নয়।”
আরও পড়ুন: ‘পুলিশ দেহ লোপাটের চেষ্টা করছে, অত সোজা হবে না’, বাম যুব কর্মীর মৃত্যুতে ফের উত্তপ্ত কলকাতা
একইসঙ্গে কুণাল ঘোষ এই ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু দিকে নজর দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মইদুল আহত হওয়ার পর কোথায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, কারা চিকিৎসা করেছেন, কী চিকিৎসা হয়েছে, তাঁর আর কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল কি না, সঠিক চিকিৎসা হয়েছে কি না- এইসব তথ্য় যতক্ষণ না সামনে আসছে এক বাক্যে বলা সম্ভব নয় যে নির্দিষ্টভাবে ওই কারণেই মারা গিয়েছেন।”
ফিরহাদ হাকিমও একই সুরে বলেছেন, “ঘটনাটি আমি জানতে পেরেছি। অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। তবে গোটা ঘটনাটি আমি নিজে না খতিয়ে দেখা পর্যন্ত বিশেষ কিছু বলতে পারব না।” রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীও এই মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বলেছেন। তবে একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, আন্দোলনকারীদের কাছে এত ইট কোথা থেকে এল। কোথাও কোনও প্ররোচনা ছিল কি না সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার।
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কিন্তু এ ক্ষেত্রেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেই নিশানা করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যত বাড়ছে, সরকার ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, “সরকারের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। কারণ মানুষ তাদের আর ভরসা করছে না। তাদের উপর ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। আর সরকার তা সামলাতে পারছে না। তাই পুলিশ এ সব করছে।”