কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসায় কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় শনিবার সিবিআই-এর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিলেন নারকেলডাঙা থানার সাব ইন্সপেক্টর রত্না সরকার। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তলব করা হয়েছিল তাঁকে। গত ৩০ অগস্ট রত্নাকে প্রথমবার তলব করা হয়। কিন্তু সেই তলবে তিনি সাড়া দেননি। অবশেষে এ দিন দ্বিতীয় ডাকে সাড়া দিলেন তিনি। সিবিআই সূত্রে খবর, শনিবার রত্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তাঁর বয়ানও রেকর্ড করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
বেলেঘাটার নিহত বিজেপি কর্মী খুনের পিছনে যেমন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছিল, তেমনই এই খুনের পিছনে আসল দোষীদের লুকাতে কম সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি পুলিশ। নিহত অভিজিতের পরিবারের পক্ষ থেকে বারবারই এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই রত্না সরকারই সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেন বলে দাবি অভিজিতের দাদা ও মায়ের। অভিজিতের মা অভিযোগ করেন, রত্নাই আসল অভিযুক্তদের বদলে অন্যদের নাম একটি সাদা কাগজে লিখে সেখানে জোর করে তাঁকে দিয়ে সই করান।
সূত্রের খবর, সেই বিষয়গুলি নিয়েই সিবিআই-এর গোয়েন্দারা এ দিন রত্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কেন অভিজিতের পরিবারকে জোর করে সাদা কাগজে সই করানো হল, কেনই বা আসল অভিযুক্তদের নাম লোকানোর চেষ্টা করল পুলিশ? এমনই সব প্রশ্নের সাঁড়াশি চাপের মুখে পড়তে হয়েছে এসআই রত্না সরকারকে।
অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ অবশ্য এই মামলায় আগাগোড়াই নারকেলডাঙা থানার বিরুদ্ধে অসহযোগিতা এবং তদন্তের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। অভিযুক্ত এসআই রত্না সরকারকে গ্রেফতার করারও দাবি তুলেছিলেন বিশ্বজিৎ। এমনকি, নারকেলডাঙা থানার ওসি-কেও গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছিলেন নিহত অভিজিতের দাদা। অন্যদিকে, সিবিআই ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনায় অভিজিতের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করেছে। অভিজিতের দেহও সম্প্রতি তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেহের সৎকারও করা হয়েছে।
তদন্তের স্বার্থেই এতদিন অভিজিৎ সরকারের দেহ সৎকার করতে দেওয়া হয়নি। পচে-গলে সেই দেহ আর চেনার কোনও উপায়ও ছিল না। দেহ পাওয়ার পর অভিজিৎ সরকারের পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, ওই দেহ আদৌ অভিজিতের কি না। তাঁদের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় দেহ সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এরপরই ডিএনএ পরীক্ষা হয় ওই দেহের। কিন্তু যেহেতু ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তাই সেই ডিএনএ রিপোর্ট ছিল সিবিআই-এর হাতে।
আরও পড়ুন: Bhawanipur Bypoll: বুথপ্রতি দু’জন করে এজেন্ট! তৃণমূলের চেনা ছকেই মমতাকে ফাঁদে ফেলতে চায় বিজেপি
বিধানসভা নির্বাচনের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতি। ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকারকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই খুন করা হয় তাঁকে। তারপর থেকে বিচারের আশায় থানা, আদালত সর্বত্রই ছুটেছে পরিবার। ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার পুরো তদন্তভার এখনও সিবিআই-এর হাতে। হয়ত সুবিচার মিলবে এক দিন, এই আশাতেই বুক বেঁধেছে পরিবার।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ‘ওঁর কানে সারাজীবন হারের যন্ত্রণা বাজবে,’ ফের মমতাকে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর